
প্রতিবেদক: ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পণ্যের মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬৫.১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে পরিমাণগত দিক থেকে এবছর আমদানিতে বেড়েছে গতি—সর্বমোট সোয়া ১৪ কোটি টন পণ্য খালাস হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ৫০টি শুল্ক স্টেশনের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই চিত্র। এসব তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানিমুখী শিল্প ও দেশীয় উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি হয়েছে, তবে স্থানীয় ও নমুনা আমদানি বাদ দিয়ে প্রকৃত আমদানির হিসাবই প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট বিরাজ করছিল। সরকার পরিবর্তনের পরও আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি বহাল থাকে। এতে ব্যবসায়ীরা এখনো আমদানিকে ‘পুরোপুরি স্বাভাবিক’ মনে করছেন না। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে এখনো উচ্চ মার্জিনে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হচ্ছে, বিশেষ করে পুরোনো জাহাজ আমদানিতে ৩০–৫০% পর্যন্ত মার্জিন দিতে হচ্ছে, যা অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
পরিমাণে আমদানি বেড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কয়লা। বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসায় কয়লার আমদানি বেড়ে ৪৮ লাখ টন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ কোটি টনে পৌঁছেছে। এছাড়া চালের আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে—গত অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছিল ১৩.৮৯ লাখ টন, যেখানে আগের বছর তা ছিল মাত্র ১ হাজার টনের নিচে।
বস্ত্রখাতের জন্য তুলা আমদানি ৮% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৫৮ লাখ টনে। এছাড়া ভুট্টা, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, লোহার স্ক্র্যাপ, ডাল, অপরিশোধিত চিনি ও এলপিজি গ্যাসের আমদানিও বেড়েছে, যা শিল্প এবং ভোক্তা বাজারের চাহিদা পূরণের ইঙ্গিত দেয়।
এদিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমদানিতে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে। যেমন, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকারের আমদানি ২ কোটি ৫ লাখ টন থেকে কমে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে নেমে এসেছে। সয়াবিন বীজের আমদানি ৭% কমেছে, পুরোনো জাহাজ আমদানি ১৫% কমেছে এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ১৯%—যা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।
এছাড়াও ডিজেল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, গম ও পণ্য পরিবহনের জাহাজের আমদানিও কমে গেছে, যা দেশের শিল্প ও পরিবহন খাতে সম্ভাব্য শ্লথতার ইঙ্গিত দেয়।
মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির হ্রাস অর্থনীতির জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও সীকম গ্রুপের এমডি আমিরুল হক বলেন, যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাস মানে নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়া। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সুদের হার কমিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক নীতি গ্রহণ জরুরি। এতে করে আমদানি বাড়বে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হতে পারে।