২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয় সর্বনিম্ন, এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৬৮ শতাংশ

প্রতিবেদক: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার নেমে এসেছে ৬৮ শতাংশে—যা ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরের পর সবচেয়ে কম। আইএমইডি (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) জানিয়েছে, সংশোধিত ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।

সরকার মূল এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা থেকে ১৮ শতাংশ কমিয়েছিল। এই ঘাটতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি এবং প্রশাসনিক ধীরগতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নয়ন ব্যয়ের এ ধীর গতি শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাত ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ব্যয় করেছে মাত্র ১৫.৩৬ শতাংশ, আর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ২২ শতাংশ।

এর বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বরাদ্দের ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করে শীর্ষে রয়েছে।সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উন্নয়ন ব্যয় কমে যাওয়াটা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং এটি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত করেছে, যা এই অবনতির অন্যতম কারণ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “নতুন প্রশাসনের পুনর্গঠন ও রাজস্ব ঘাটতির কারণে জুলাই-আগস্টে কার্যত কোনো কাজ হয়নি।” তিনি এটিকে প্রশাসনিক অকার্যকারিতা এবং দীর্ঘসূত্রতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন।

সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক অনিচ্ছা এডিপি বাস্তবায়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকেরা জানান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ক্রয় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই মূলত এই বাস্তবায়নহীনতার পেছনে রয়েছে।

আইএমইডি সচিব কামাল উদ্দিন এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, সদ্য দায়িত্ব নেওয়ায় তিনি এখনো পুরো চিত্র বুঝে উঠতে পারেননি।