
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ক্ষমতায় বড় খেলাপি ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৮০টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং আরও এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের আবেদন প্রক্রিয়াধীন। শুধুমাত্র যাদের ঋণের স্থিতি ৫০ কোটি টাকার বেশি, তাদের এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে গঠিত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হচ্ছে।
প্রচলিত নিয়মে ঋণ খেলাপি হলে গড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে ঋণ নবায়ন করা যায় এবং ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৭ বছর মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ থাকে। কিন্তু এবার বিশেষ ব্যবস্থায় ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে, সর্বোচ্চ ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ড ও ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ মিলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, করোনাভাইরাস, ডলার সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এই সুবিধা পাচ্ছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এর আগেও একই ধরনের সুযোগ পেয়েছিল। সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে তখনই, যখন গ্রাহক নির্দিষ্ট অঙ্ক জমা দেবে।
এ পর্যন্ত এনার্জিপ্যাক গ্রুপ, বিল্ডট্রেড গ্রুপ, ভার্গো মিডিয়া, সৌরভ গ্রুপ, এরশাদ গ্রুপ, ব্লু প্ল্যানেট গ্রুপের প্যালেস রিসোর্ট, স্কাই ক্যাপিটাল, বদর স্পিনিং মিলস, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, বেঙ্গল প্লাস্টিক, আবদুল মোনেম গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, ওপেক্স সিনহা, তানাকা গ্রুপ, গাজী গ্রুপ, ড্যান্ডি ডাইং, রাইজিং স্টিল, সাবাব ফেব্রিকস, ওয়ান ডেনিম, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, ইফাদ গ্রুপ, এমবিয়েন্ট স্টিল, জিপিএইচ ইস্পাত, প্রাইম গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, সিল্কওয়েজ, ডায়মন্ড স্পিনিং, মীম গ্রুপ, এসএমএ গ্রুপ, বিইউসি অ্যাগ্রো, ব্লিং লেদার, অ্যাপেক্স ওয়েভিং ও অঙ্কুর স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ পেয়েছে। তবে সব প্রতিষ্ঠানের সব ঋণ খেলাপি নয়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের আংশিক ঋণ খেলাপি।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২৭ শতাংশ। মার্চ শেষে এ পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন খেলাপি ঋণ কিছুটা কমাতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি না ফিরলে এই ঋণ আবার খারাপ হয়ে যাবে। এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, এবার রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং যৌক্তিক কারণে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যা ইতিবাচক। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।