
আর্থিক সক্ষমতা ও সচেতনতার অভাবে প্রায় ৯৮.৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সার্বজনীন পেনশন স্কিমে (UPS) অংশ নেননি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক মনডিয়াল এফএনভি পরিচালিত ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম: বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটি রাজধানীর ১১টি এলাকার ২০০ পোশাক শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে তৈরি করা হয়।
সোমবার রাজধানীর শ্রম ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম।
গবেষণা অনুযায়ী, শ্রমিকদের পেনশনের আওতায় না আসার মূল কারণগুলো হলো—
ডিজিটাল আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অপরিচিতি।
প্রগতি স্কিমে মাসিক চাঁদার হার তুলনামূলক বেশি।
চাকরি না থাকলেও ১০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা।
পেনশনের আওতায় ঋণ নেওয়া বা স্কিম তুলে নেওয়ার সুবিধা নেই।
চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ না থাকা।
তথ্য বলছে, একই কারখানায় মাত্র ৮ শতাংশ শ্রমিক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেন। ফলে অনেক শ্রমিক পেনশনের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার প্রতি আগ্রহী নন।
গবেষণায় দেখা গেছে— ৬৪.৭ শতাংশ শ্রমিক প্রতি মাসে পেনশনের টাকা জমা দেওয়ার অবস্থায় নেই।৭৫.৩ শতাংশ শ্রমিকই পেনশন সম্পর্কে জানেন না।৬১.৩ শতাংশ শ্রমিক পেনশনের আওতায় আসতে আগ্রহী নন, কারণ তারা মনে করেন তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই।
অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—চাকরি হারানোর ভয়, ছাঁটাই, দুর্ঘটনা, পেশাগত অসুস্থতা, আগুন বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি।সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার অভাব (পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, এককালীন গ্র্যাচুইটি সুবিধা, শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি)
যদিও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছে, তবে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে এই তহবিল পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
গবেষণায় কয়েকটি মূল সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—মাসিক পেনশন চাঁদার পরিমাণ কমানো,প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা,বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা,চাকরি না থাকলে স্কিম তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া,পেনশন স্কিমে ঋণ সুবিধা চালু করা। সংকটের সময় সাময়িকভাবে টাকা জমা না দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা।একই পেনশন আইডি দিয়ে চাকরি পরিবর্তনের সুবিধা রাখা।
এছাড়াও, পোশাক শ্রমিকরা যদি নির্দিষ্ট সময় চাকরি করেন বা ন্যূনতম পাঁচ বছর স্কিমে টাকা দেন, তবে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ রাখা উচিত বলে গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের মধ্যে পেনশনের সুফল সম্পর্কে সচেতনতা ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত যোগাযোগ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাও জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পোশাক খাতে শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষায় পেনশন স্কিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সচেতনতার অভাব, আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং অনিশ্চিত চাকরির বাজারের কারণে বেশিরভাগ শ্রমিক এই সুবিধার আওতায় আসতে পারছেন না। গবেষণায় প্রদত্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হবে।