যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বেড়ে দ্বিগুণ, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পড়ছে সংকটে

প্রতিবেদক: চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ডলারের একটি চিনো ট্রাউজার বা টুইল প্যান্ট আমদানিতে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি প্যান্টে খরচ হবে ১৫.১০ ডলার (জাহাজভাড়া ছাড়া)। এর ফলে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতা হারাতে বসেছে।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা থাকবে না। বিদেশি ক্রেতারাও হতাশা প্রকাশ করছেন। আগামী সপ্তাহ থেকেই চলমান এবং ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ অবস্থায় কারখানা গুলোতে ক্রয়াদেশ কমে গেলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিও বাড়বে। তৈরি পোশাকশিল্পই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশি পণ্যে গড় শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ। তুলনায় ভিয়েতনামের ওপর এই শুল্ক ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৩২, লাওস ও মিয়ানমারের ৪০, কোরিয়া-জাপান-মালয়েশিয়া-তিউনিসিয়ার ২৫, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ৩৬ শতাংশ। অথচ ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে এবং ভারতের সাথেও চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সতর্ক করে বলেন, যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীল এবং আর্থিকভাবে দুর্বল, তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করতে পারলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়বে।

তবে এখনো আলোচনা চলমান। ৭ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন নতুন শুল্ক কার্যকর করলেও, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদল ১১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (USTR) সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ব্যবসায়ীদের মতে, দর–কষাকষির সময়সীমা কাজে লাগিয়ে সরকারের উচিত এ সংকট সমাধানে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে না পৌঁছালে রপ্তানি আয় হ্রাস, শ্রমিক ছাঁটাই এবং শিল্প খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। এই অবস্থায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখনই কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।