
অনলাইন ডেক্স: সম্প্রতি আমদানিকৃত ফলের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের পর ফলের দাম বাড়ায় অনেকেই ক্রয় তালিকা থেকে এসব ফল বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি শুকনো ও টাটকা ফল আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করেছে। আপেল, আঙুর, তরমুজসহ কিছু ফল এবং জুসের শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত পূরণের জন্য রাজস্ব আদায় বাড়ানোর প্রয়াস হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে যখন দেশে মূল্যস্ফীতি প্রায় দুই বছর ধরে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
ফলের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারা সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছেন। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, আপেল, কমলা, মালটা এবং আঙুরের মতো ফলের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারে আসা এক ক্রেতা নাজনীন আখতার বলেন, ‘আগে যে পরিমাণে ফল কিনতে পারতাম, এখন আর সেটা পারি না। বর্তমানে ২ কেজি কমলা ও ২ কেজি আপেল কিনতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত দেড় কেজি করে নিতে হলো।’
ফল ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে পাইকারি বিক্রি ২০-২৫ শতাংশ কমে গেছে। কারওয়ান বাজারের দোকান মালিক মোহাম্মদ সাগর মিয়া বলেন, ‘খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফলে ১৫-২৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কালো আঙুরের দাম প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ টাকায় পৌঁছেছে। ছোট ডালিমের দাম ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকা হয়েছে।’
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা সরকারের কাছে নিয়ন্ত্রক শুল্ক প্রত্যাহার এবং অগ্রিম আয়কর কমানোর অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ার আগে শুল্ক কমানোর অনুরোধ করা হয়েছিল, কারণ রোজায় মানুষের ফল খাওয়ার পরিমাণ বেশি। তবে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে।’
ফল ব্যবসায়ীরা ও ক্রেতারা সরকারের প্রতি শুল্ক কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আগে থেকেই ফল কেনার পরিমাণ কমে গেছে, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তা আরও কমবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে শুল্ক বৃদ্ধির পরিবর্তে বিকল্প রাজস্ব উৎসের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।