শেখ হাসিনা পরিবার ও ১০ শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক অপরাধের তদন্ত চলছে

অনলাইন ডেক্স: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ পাচার, কর ও শুল্ক ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১১টি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নেতৃত্ব দিচ্ছে দুদক, আর সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আইনগত সহায়তা দিচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

শেখ হাসিনার পরিবারের পাশাপাশি যেসব শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ এবং আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের প্রধানদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।

তদন্ত কার্যক্রমের জন্য কয়েকটি বিশেষ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন ও বিধিমালা মেনে তদন্ত চালানোর পাশাপাশি তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। এছাড়া তদন্ত দলের প্রধান নিজ সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন। যৌথ অনুসন্ধানের অগ্রগতি ও কার্যক্রম অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানো হবে।

সরকারের নির্দেশনায় ৬ জানুয়ারি এই যৌথ তদন্তের নেতৃত্ব ও শর্ত চূড়ান্ত করা হয়। বিএফআইইউ জানায়, সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা, জালিয়াতি, কর ফাঁকি, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইতিমধ্যে তদন্তের আওতায় থাকা বেশিরভাগ গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব ব্যবসায়ী গ্রুপের সম্পদ, ব্যাংক ঋণের ব্যবহার, অর্থের গতিপথ এবং তাদের লেনদেন বিশদভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বিদেশে সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যোগাযোগ করা হয়েছে।

দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশি সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ৬৮টি ব্যাংক হিসাব এবং ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের ৫৮০টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, ইউএইতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পদ রয়েছে।

তদন্ত কার্যক্রমে সিআইডি এবং অন্যান্য সংস্থা দুদককে সহযোগিতা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।