পোল্ট্রি শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা: আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো-তে আশাবাদী খামারিরা

অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প শূন্য থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে পৌঁছেছে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তা ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমান।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনব্যাপী ১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শোর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয়েছে।

২৭টি দেশের ২০০-এর বেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছে এবং ৮০০টির বেশি স্টলে পোল্ট্রি পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শন করেছে। উদ্যোক্তা ও খামারিদের সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির বিজনেস টকস অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে অন্তত ১,০০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মেলার আয়োজক ওয়াপসা-বিবি ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আশা করছে, আগামী দুই বছরে বেশ কিছু ছোট-বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যা নিরাপদ ডিম, মুরগি ও ফিডের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে মসিউর রহমান বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প হবে দক্ষিণ এশিয়ার অনুকরণীয়।ভবিষ্যতে এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি শো বাংলাদেশেই আয়োজনের আশা করা হচ্ছে।

সব খামারের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ছাড়া নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।পোল্ট্রি রিসাইক্লিং সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে পারে, এজন্য প্রযুক্তি আমদানিতে ছাড় এবং শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা প্রয়োজন।পোল্ট্রি শিল্পে ‘নেট জিরো কার্বন’ লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। বড় ও মাঝারি খামারগুলোর রুফটপে সোলার প্যানেল স্থাপন করলে শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বিপিআইসিসির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ছোট খামারগুলোর আকার বাড়াতে হবে। মাত্র ৫৪ বছরে প্রতি বছর মাথাপিছু মুরগির মাংসের পরিমাণ ১ কেজি থেকে ১০ কেজিতে এবং ডিম ২০টি থেকে ১৩৫টিতে পৌঁছেছে।২০৩৫ সালের মধ্যে মাংস ও ডিমের পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে।
শুধু প্রোটিন গ্রহণ বাড়ালেই হবে না, সবার জন্য সুষম বণ্টন নিশ্চিত করাও জরুরি।

ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রমাণিক বলেন,প্রতিদিন জনপ্রতি একটি করে ডিম খাওয়া হলে পোল্ট্রি শিল্পের আকার দ্বিগুণ হবে।মেলা শহরের বাইরে অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্সটেন্স বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে ‘পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নেদারল্যান্ডস সরকার। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে গবেষণা ও শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের পোল্ট্রি খাত, শিক্ষক ও গবেষকদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ডাচ সরকার ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু সুফিয়ান বলেন,উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগালে বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত আরও এগিয়ে যাবে।২০২৭ সালে ১৪তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে এবারের মেলা শেষ হয়।