চীনে বিপুল পরিমাণ থোরিয়াম আবিষ্কার:৬০ হাজার বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর সম্ভাবনা

অনলাইন ডেক্স: বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক দেশ চীন শিল্প-কারখানা ও ভোক্তা চাহিদা পূরণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাস আমদানি করে থাকে। তবে এবার দেশটির বিজ্ঞানীরা বিকল্প জ্বালানির এক বিশাল উৎসের সন্ধান পেয়েছেন, যা দিয়ে চীনের ৬০ হাজার বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে।

ডেইলি মেইল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় বায়ান ওবো খনিজ কমপ্লেক্সে বিপুল পরিমাণ থোরিয়াম পাওয়া গেছে। দেশটির ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এই থোরিয়ামের মজুত এত বিশাল যে তা দিয়ে প্রতিটি চীনা পরিবারের অনন্তকাল জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

থোরিয়াম একটি হালকা মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, থোরিয়াম ব্যবহার করে মল্টেন-সল্ট রিঅ্যাক্টর চালানো সম্ভব, যা থেকে অসীম পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে।

দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি এই খনি থেকে পুরো থোরিয়াম উত্তোলন করা যায়, তাহলে তার পরিমাণ হবে ১০ লাখ টন। গবেষকদের দাবি, এটি সারা বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া, ইনার মঙ্গোলিয়ার লোহার আকরিকের একটি খনি থেকে পাঁচ বছরে যে পরিমাণ থোরিয়াম বর্জ্য হিসেবে পাওয়া যাবে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১,০০০ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

এই আবিষ্কার এমন সময়ে এলো, যখন চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজছে। গবেষণায় চীনে ২৩৩টি থোরিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চল চিহ্নিত হয়েছে, যা আগের সমস্ত অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি।

বর্তমানে প্রচলিত পারমাণবিক চুল্লিগুলোতে ইউরেনিয়াম-২৩২ ব্যবহার করা হয়। তবে চীনে যে পরিমাণ থোরিয়াম পাওয়া গেছে, তা ইউরেনিয়ামের তুলনায় কমপক্ষে ৫০০ গুণ বেশি।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য থোরিয়াম সরাসরি ফিশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায় না, তবে এটি “উর্বর” পদার্থ। যখন থোরিয়াম নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে বিক্রিয়া করে, তখন এটি ইউরেনিয়াম-২৩৩-এ পরিবর্তিত হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।

মল্টেন-সল্ট রিঅ্যাক্টরে থোরিয়াম লিথিয়াম ফ্লোরাইডের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে প্রায় ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়। এরপর এটি নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়ে ফিশন বিক্রিয়া শুরু করে। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন নতুন নিউট্রনগুলো আরও থোরিয়ামের বিক্রিয়া ঘটিয়ে একে জ্বালানিতে রূপান্তর করে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারমাণবিক চুল্লি বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়, যা চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

এই আবিষ্কার বিশ্বের জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। থোরিয়ামের ব্যাপক মজুত শুধু চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ সুগম করবে।