শিক্ষার উন্নয়নে বরাদ্দে বড় ধরনের কাটছাঁট, ১১ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে

অনলাইন ডেক্স: শিক্ষা খাতে উন্নয়নে বরাদ্দে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমে ১১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা, যা এখন ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূল এডিপিতে শিক্ষার উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি পাস হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায়। এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও, প্রতিবছরই এই দুটি খাতে বরাদ্দে কাটছাঁট করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, তবে এবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়, এবং এই আন্দোলনের মূল উৎস ছিল শিক্ষার্থীদের কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন। সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে নতুন সমস্যাগুলো সামনে আসে, যেমন বেকারত্বের উচ্চ হার এবং চাকরি না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা।

শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর কারণ হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের খরচ করার সক্ষমতা কমেছে। অতীতে সরকারি ঠিকাদাররা বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করলেও, এখন অনেকেই পলাতক হয়ে গেছেন, ফলে উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে। আরও, কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে, যার কারণে শিক্ষাখাতে প্রকল্পের অগ্রগতি কমেছে। এসব কারণে বরাদ্দ কমানো ছিল অবধারিত।

এটি নতুন নয়, প্রতিবছরই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল, এবং ওই বছর সংশোধিত এডিপিতে শিক্ষা খাতে ১৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব নয়, কারণ শিক্ষা অন্যান্য সব খাতকে প্রভাবিত করে। বিশ্বের ১৮৯টি সদস্যদেশের মধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশেরও কম খরচ করে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১.৭৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ এমন ১০টি দেশের মধ্যে একটি, যাদের জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে খরচ সবচেয়ে কম। এই তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি রয়েছে বারমুডা, হাইতি, মৌরিতানিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, মোনাকো, পাপুয়া নিউগিনি, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদান, যেগুলি অধিকাংশই অতি দারিদ্র্য দেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। এটি অর্জন করতে হলে বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দিতে হবে।