
অনলাইন ডেক্স: দেশে প্রায় দেড় বছর ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চিকন ও মোটা চালের দাম এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থানে। গত আগস্টে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ফসলহানির প্রেক্ষাপটে সরকার বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। তবে পাঁচ মাস পার হলেও ব্যবসায়ীরা অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় খুব কম চাল আমদানি করেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা অনুমোদিত ১৬.৭৫ লাখ টন চালের বিপরীতে আমদানি করেছেন মাত্র ২.৬৩ লাখ টন, যা অনুমোদিত পরিমাণের মাত্র ১৭ শতাংশ।
আমদানিকারকদের মতে, ডলারের উচ্চমূল্য, আমনের ভালো ফলন এবং বাজারে আমদানি করা চালের কম চাহিদা তাদের জন্য আমদানি লাভজনক না হওয়ার প্রধান কারণ।
একজন বিশেষজ্ঞের মতে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করে লাভের সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, আমনের ভালো ফলন, সরকারি চাল ক্রয় ও আমদানি চুক্তি খাদ্য মজুদকে শক্তিশালী করেছে, যা বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালাতে সাহায্য করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, অনুমোদিত ১৬.৭৫ লাখ টনের মধ্যে ১২.১৯ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও বাকিটা আতপ।
২০২৩ সালের মার্চ থেকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি, ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাপে রয়েছেন।
চাল আমদানিকারক আলমগীর হোসেন জানান, ৩৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেলেও তিনি মাত্র ৯ হাজার টন আমদানি করেছেন।
তিনি বলেন, “ডলারের বাড়তি দাম ও এলসি খোলার জটিলতা বড় বাধা। আমদানি করা চাল বাজারে লাভজনক নয়, তাই পুরোপরিমাণ চাল আনিনি।”
এসিআই ফুডস লিমিটেডের প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজার মো. জিয়াউর রহমান জানান, ৬ হাজার টনের অনুমতি পেলেও তারা আমদানি করেছেন মাত্র ১.৮ হাজার টন।
তিনি বলেন, “আমরা ৭০ টাকা কেজি দরে চাল আমদানি করি, কিন্তু ৭৫-৭৬ টাকা বিক্রি না করলে মুনাফা হয় না। বাজারে দাম ও গুণগত মান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
অপর আমদানিকারক চিত্ত মজুমদার বলেন, “এক লাখ টন আমদানির অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত ২২ হাজার টন এনেছি। চাহিদা কম থাকায় ১৫ হাজার টন চাল অবিক্রিত রয়ে গেছে, যা এখন বিক্রি করলে লোকসান হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
- চিকন চাল: ৭২-৮৫ টাকা/কেজি
- মাঝারি চাল: ৫৮-৬৫ টাকা/কেজি
- মোটা চাল: ৫০-৫৫ টাকা/কেজি
গত বছরের তুলনায় চিকন চালের দাম ১৪.৬০%, মাঝারি চাল ১৩.৮৯%, এবং মোটা চাল ৫% বেড়েছে।
বাংলাদেশে বছরে ৩.৭ থেকে ৩.৯ কোটি টন চালের চাহিদা রয়েছে, যা মূলত দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানি হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাজার পরিস্থিতি এবং সরকারের নীতিমালা চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও চালের উচ্চমূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।