আধুনিকায়নের পথে দেশের বন্ধ চিনিকল: আসছে বিদেশি বিনিয়োগ

প্রতিবেদক: এদেশের চিনি শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয়টি চিনিকলকে লাভজনক করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে পরিচালনাগত অদক্ষতার কথা বলে তৎকালীন সরকার ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এসব চিনিকল আধুনিকায়নে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।

এই প্রকল্পে সম্ভাব্য অর্থায়নের জন্য জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) এবং থাইল্যান্ডের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম) যৌথভাবে এগিয়ে এসেছে, যেখানে বেশিরভাগ অর্থায়ন করবে জেবিআইসি।

গত ১৬ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মতামত চায়, কারণ প্রকল্পটিতে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি রয়েছে।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো আধুনিকায়নে বিএসএফআইসি বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার ঘোষণা দেয়। তবে ২০২৩ সালের আগস্টে সরকারের পরিবর্তন এবং এস আলম গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই চুক্তি বাতিল করে।

এরপর ২০২৪ সালের মার্চে আরব আমিরাতভিত্তিক শারকারা ইন্টারন্যাশনাল (এফজেডসি), থাইল্যান্ডের সুটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং জাপানের মারুবেনি প্রোটেকস করপোরেশন চিনিকলগুলোর আধুনিকায়নে যৌথভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দেয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিডাকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় বন্ধ ছয়টি চিনিকল সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানায় বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে পুনরায় চালু করা হবে।

জেবিআইসি ও এক্সিম ব্যাংক বিদেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নকশা সংগ্রহের জন্য ঋণ দেবে।বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনায় অর্থায়ন করবে।শারকারা, সুটেক ও মারুবেনি কোম্পানিগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় চিনিকলগুলোর দক্ষতা বাড়াতে কাজ করবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো আধুনিক ও লাভজনক করা সম্ভব। তবে এর জন্য কার্যকর প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, সরকারের কাজ ব্যবসা করা নয়। প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বাড়াতে লোকসানে থাকা কারখানাগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এতে চিনিকলগুলো দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এবং লোকসান কমবে।

এক বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি বলেন, চিনিকলগুলো চালু হলে শুধু কর্মসংস্থান বাড়বে না, বরং হাজার হাজার আখচাষিও লাভবান হবেন।

বিএসএফআইসির সচিব মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান জানান, চিনি শিল্পকে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করা গেলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।

বাংলাদেশের চিনি শিল্প দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চিনির কম চাহিদা এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। বর্তমানে বিএসএফআইসি ১৫টি চিনিকল তত্ত্বাবধান করছে, যা বড় ঋণের ভারে জর্জরিত।

প্রস্তাবিত আধুনিকায়ন প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে চিনিকলগুলো লাভজনক হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি করা চিনির ওপর নির্ভরতা কমবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত আধুনিকায়নের উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বন্ধ ছয়টি চিনিকলের পাশাপাশি অন্য নয়টি চিনিকলও ধীরে ধীরে লোকসানের মুখে পড়তে পারে।