অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন খসড়া: ব্যাংক আমানতের নিরাপত্তায় কঠোর নীতিমালা আসছে

প্রতিবেদক: সরকার ব্যাংক আমানত বীমা আইন বাতিল করে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতামত আহ্বান করেছে। খসড়ায় বলা হয়েছে জনগণের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই এ আইনের মূল উদ্দেশ্য।

বর্তমান ব্যাংক আমানত বীমা আইনকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করতে এ নতুন অধ্যাদেশ আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগেই ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের সুপারিশ করেছিল। ২০২২ সালে এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায় এবং পরবর্তী সময়ে সংসদেও পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর আইনের খসড়া সংশোধনের উদ্যোগ নেন। সংশোধিত খসড়াটি ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ডিপোজিট ইন্স্যুয়ার্স (আইএডিআই)’-এর মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এখন এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)-এর আমানতও সুরক্ষার আওতায় আসবে।কোনো ব্যাংক বিলুপ্ত হলে প্রত্যেক আমানতকারীকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

প্রতি তিন বছর অন্তত একবার আমানত সুরক্ষার সীমা পুনর্বিবেচনা করবে ।বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আমানত সুরক্ষা বিভাগ গঠন করা হবে।

গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, যা সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন,ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা বাড়ানো আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য হিসাবপ্রতি আমানত বীমার পরিমাণ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ৯৪.৬% ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী তাদের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাবেন।

ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের আমানত সুরক্ষায় আমানত সুরক্ষা তহবিল গঠিত হবে।ব্যাংক থেকে প্রারম্ভিক, বার্ষিক ঝুঁকি ভিত্তিক ও বিশেষ প্রিমিয়াম নেওয়া হবে।

ব্যাংক লাইসেন্স পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের ০.৫% প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম হিসেবে জমা দিতে হবে।

তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জন্য আলাদা নীতিমালা থাকবে।নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র, বৈচিত্র্যময়তা ও তারল্য সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।প্রয়োজনে কোনো পেশাদার সম্পদ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করা যেতে পারে।

নতুন ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ কার্যকর হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জনগণের আস্থা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা নিশ্চিন্তে তাদের অর্থ ব্যাংকে রাখতে পারবেন। এছাড়া, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।