
প্রতিবেদক: সরকার স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকদের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ—স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির ফলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে সুতা আমদানি করা হয়, যা তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। তবে, অধিকাংশ স্থলবন্দরে সুতার মান যাচাই ও শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি অবকাঠামো নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এ সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকার স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ তারা স্থলবন্দর ব্যবহার করে তুলনামূলক কম খরচে ও দ্রুত সুতা আমদানি করতে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (BGMEA) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন—আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সীমান্ত এলাকায় থাকা ছোট কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা স্থলবন্দর ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল, ফলে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (NBR) দেওয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করেন—স্থলবন্দরে সঠিক মান যাচাই এবং শুল্ক পরিশোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।আংশিক আমদানির অনুমতি থাকলেও এর অপব্যবহার হচ্ছে, ফলে স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।ভারত থেকে বাংলাদেশে টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে, যা দেশের স্বার্থবিরোধী।
তিনি আরও বলেন—স্থানীয় শিল্প ও কর্মসংস্থান সুরক্ষায় সরকারকে এ ধরনের নীতি পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায়, স্থানীয় টেক্সটাইল খাত অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করবে, পোশাক উৎপাদনের খরচ বাড়াবে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমাবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন—স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর নগদ প্রণোদনা হ্রাসের ফলে স্থানীয় মিলগুলোর কাছে সুতার মজুত তৈরি হয়েছে। তবে পোশাক রপ্তানিকারকরা কম প্রণোদনায় দেশীয় সুতা কিনতে আগ্রহী নন। এছাড়া, ভারত থেকে আমদানি করা সুতার দাম কম হওয়ায় স্থানীয় মিলগুলোর প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
বাংলাদেশে ৩০ কাউন্ট সুতার প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ এখন ৩.৪০ ডলার,অথচ ভারত থেকে আমদানি করলে প্রতি কেজি খরচ ২.৯০ ডলার।
এ কারণে অনেক পোশাক কারখানা দেশীয় সুতা কেনার বদলে আমদানির দিকে ঝুঁকছে।
ছোট ও মাঝারি কারখানার সংকট বাড়বে।সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে বেশি সময় লাগবে, ফলে ফাস্ট ফ্যাশন পোশাক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিটিএমএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন—সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বদলে স্থলবন্দরে কাস্টমস মনিটরিং ও প্রসেসিং উন্নত করাই ভালো সমাধান হতে পারে।
বিটিএমএ চিঠিতে উল্লেখ করেছে—বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে মান যাচাইয়ের যথাযথ ব্যবস্থা নেই।দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে কার্যকর নয়।
মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অননুমোদিত সুতা বাজারজাত হচ্ছে।একই এলসির (L/C) বিপরীতে বারবার সুতা প্রবেশ করানো হচ্ছে, যা সরকারকে রাজস্ব ক্ষতির মুখে ফেলছে।
বিটিএমএ পরামর্শ দিয়েছে,সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করেই সুতা আমদানি করতে হবে।সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে।মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ হবে।সঠিক মান যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় টেক্সটাইল খাতের জন্য সুরক্ষা দিতে পারে, তবে একইসঙ্গে এটি ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তাই, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন, বা ছোট কারখানাগুলোর জন্য বিশেষ ছাড়ের সুপারিশ করেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই দাবিগুলো কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।