
প্রতিবেদক: গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। এ উপলক্ষে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকারদের মতে, মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় বৈধ উপায়ে পাঠাতে উৎসাহী হয়েছেন। এর ফলে রমজান মাসে প্রবাসী আয় নতুন রেকর্ড গড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাসের প্রথম ২৪ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের মোট আয় ২৫২ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি। ব্যাংকাররা আশা করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। ডলারের মূল্য নিয়েও যে অস্থিরতা ছিল, সেটিও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ১৫ দিনে এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। ১৯ মার্চ পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলারে। ১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত আসে ২৪৩ কোটি ডলার।২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় বেড়ে হয় ২৭০ কোটি ডলার।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়, শুধু ১৯ মার্চ একদিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার।
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে মাত্র পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলার এসেছিল, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ডলার।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। পরের চার দিনে প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন।
গত বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় ছিল ২৫২.৮০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭% বেশি।জানুয়ারিতেও প্রবাসী আয় ছিল ৩% বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১,৮৪৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪% বেশি।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার প্রতিযোগিতা কমে আসায় ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও ডলারের দাম কমে এসেছে। একসময় ডলারের মূল্য ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, তবে বর্তমানে এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রবাসী আয় হলো দেশের একমাত্র দায়বিহীন বৈদেশিক মুদ্রার উৎস।এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না।রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজন হয়, কিন্তু রেমিট্যান্স একেবারে নিখাদ বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ।বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু রেমিট্যান্স সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ায়।
সব মিলিয়ে, প্রবাসী আয়ের বর্তমান ধারা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করছে।