
প্রতিবেদক: সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। একইসঙ্গে চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দেওয়াতেও অনেক কারখানা পিছিয়ে রয়েছে। এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি চলতি মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সরকারও এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা রপ্তানি প্রণোদনা ছাড় করেছে।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৪৩টি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সংকট চলছে। এর মধ্যে ১২টি কারখানার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন, কেউ কেউ ঈদের ছুটি ও বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
গতকাল (বুধবার) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বকেয়া বেতনের দাবিতে মানববন্ধন করেন মাহমুদ জিনস কারখানার শ্রমিকরা। তারা অভিযোগ করেন, মাসের পর মাস তারিখ দিলেও মালিকপক্ষ তাদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করছে না।
বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান, সড়ক অবরোধ ও বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে সরকার গত মঙ্গলবার ১২টি বন্ধ কারখানার মালিকদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে—
রোর ফ্যাশন,স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স,ডার্ড গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান,মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান,টিএনজেড গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান।এর মধ্যে স্টাইলক্রাফট চালু থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে।
ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৩,৫৫৫টি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানা ২,১০৭টি।
৯২% কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে।৩৬% কারখানা চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে।১৬টি কারখানা এখনও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।
বিকেএমইএর সচল কারখানা ৬১৩টি। এর মধ্যে—৮০% কারখানা ঈদ বোনাস দিয়েছে।৫০% কারখানা চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেছে।২টি কারখানা এখনও ফেব্রুয়ারির বেতন বাকি রেখেছে।
রোর ফ্যাশন ময়মনসিংহের ভালুকার রোর ফ্যাশন জানুয়ারিতে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। ১,৩৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা ৭০ লাখ টাকা, যার মধ্যে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেতন-ভাতা অন্তর্ভুক্ত।
স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স এই দুই কারখানার মালিক এক হলেও ইয়াং ওয়ান্স বন্ধ হয়ে গেছে। স্টাইলক্রাফট আংশিক চালু রয়েছে। তবে প্রায় ২,০০০ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
টিএনজেড গ্রুপএই গ্রুপ ডিসেম্বরের ২০% বেতন, জানুয়ারির অর্ধেক বেতন, ফেব্রুয়ারির সম্পূর্ণ বেতন এবং ঈদ বোনাস এখনও পরিশোধ করেনি।
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, চার-পাঁচটি কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা রয়েছে, যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার বলেন, সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল।প্রয়োজনে মালিকদের সম্পত্তি বিক্রি বা বিজিএমইএ-বিকেএমইএর তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনা মেটানো উচিত।
তৈরি পোশাক খাত দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংকট চলছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ না হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সরকার ও মালিকপক্ষ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করলে ভবিষ্যতে শিল্প খাতের স্থিতিশীলতা আরও হুমকির মুখে পড়তে পারে।