
প্রতিবেদক: অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির গতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো দেশের তুলনায় এখনও অনেক কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নতুন বাজারে ৫১২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৬৬ শতাংশ বেশি। অথচ একই সময়ে ইইউতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ শতাংশ এবং কানাডায় ১৫ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, এই অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মোট ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ গেছে ইইউতে, ১৯ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে, ১১ শতাংশ যুক্তরাজ্যে, ৩ শতাংশ কানাডায় এবং ১৭ শতাংশ নতুন বাজারে। তবে নতুন বাজারগুলোর মধ্যে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি কমেছে। অস্ট্রেলিয়া ও চীনে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও তা খুবই সীমিত।
নতুন বাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার জাপান। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ৯৬ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় বড় বাজার অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৫ কোটি ডলারের, প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.৯৭ শতাংশ। তৃতীয় বাজার ভারত, যেখানে রপ্তানি হয়েছে ৫৪ কোটি ডলারের, প্রবৃদ্ধি ২০.৪৫ শতাংশ। তুরস্কে রপ্তানি হয়েছে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার, যা ৩২.৫৪ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি কিছুটা কমেছে—৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪.৬৭ শতাংশ কম। রাশিয়ায় রপ্তানি কমেছে আরও বেশি—১০.৮৫ শতাংশ, যেখানে রপ্তানি হয়েছে ২৫ কোটি ডলারের পোশাক।
এই পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। বাংলাদেশের পণ্যের ওপরও আরোপ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক। যদিও সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য কিছু শুল্ক স্থগিত করা হয়েছে, তবু ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ব্যয় বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশের অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া জরুরি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এশিয়ার বড় বাজারগুলোতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। চীন বছরে ২,৮০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে এবং ভারত আমদানি করে ৭৫০ বিলিয়নের পণ্য। অথচ বাংলাদেশ চীনে ১ বিলিয়ন ও ভারতে ২ বিলিয়নেরও কম রপ্তানি করে। তিনি বলেন, এই বাজারগুলোতে মনোযোগ দিলে পণ্যের বৈচিত্র্য ও বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বড় বাজারগুলোর ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে।