
প্রতিবেদক: দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে অবস্থিত বহু হোটেল ও রেস্তোরাঁ গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না—এমন অভিযোগে ৭০টি রেস্তোরাঁ শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই ফাঁকি ঠেকাতে এসব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের এক বৈঠকে চূড়ান্তভাবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীন বিভিন্ন অঞ্চলে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, ভ্যাট চালান না দেওয়ার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সচেতন ভোক্তা ও ভ্রমণকারীরা বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ করে থাকেন। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট অফিসগুলোকে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিসকে ইএফডি বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এই উদ্যোগ নিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, যদি কেবল ২০-৩০টি রেস্তোরাঁয় ইএফডি বসিয়ে বাকিগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে বৈষম্য তৈরি হবে। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করবে, তাদের খরচ বাড়বে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। তার মতে, সকল রেস্তোরাঁয় একযোগে ইএফডি বসাতে হবে, তবেই ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হবে এবং ব্যবসায় সমতা আসবে।
ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের অধীনে গাজীপুর, মাওনা ও বাঘের বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যেমন—হোটেল নিরিবিলি-২, নিরিবিলি পিৎজা কিং, ড্রিম হেভেন, আরএস ক্যাফে ও খুশি মিঠাই ঘর।
কুমিল্লা অঞ্চলে পদুয়ার বাজার, আহমেদনগর, দুর্গাপুর ও বিশ্বরোড এলাকার প্রায় ২০টির বেশি হোটেল-রেস্তোরাঁ এই তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—হোটেল নুরজাহান, মিয়ামি রিসোর্ট সিরিজ, কাবাব এক্সপ্রেস, হাইওয়ে ইন, লাকি হোটেল ইত্যাদি।
রাজশাহী কমিশনারেটের আওতায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও পাবনার হোটেল-রেস্তোরাঁও রয়েছে এই উদ্যোগের আওতায়। উল্লেখযোগ্য কিছু নাম—ভিলা হানিফ, মামা ভাগনে হোটেল, অ্যারিস্ট্রোক্রেট হাইওয়ে ইন, নিউ জনতা হোটেল, পেন্টাগন হোটেল।
রংপুর অঞ্চলে ইএফডি বসছে আহার হোটেল, লবঙ্গ হোটেল, কচুরী রেস্তোরাঁ ও পারভেজ হোটেলসহ কয়েকটি জনপ্রিয় হোটেলে। এ ছাড়া দিনাজপুর ও গাইবান্ধার কিছু হোটেলও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে পটুয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালের রেস্তোরাঁগুলোও এই তালিকায় এসেছে। যেমন—বিরতি রেস্তোরাঁ, বাসমতি রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ঘরোয়া, পদ্মা ভ্যালি রিসোর্ট, সাকুরা ফুড ভিলেজ, রিফ্রেশ জোন ইত্যাদি।
এনবিআরের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মহাসড়কে অবস্থিত ভ্যাটযোগ্য হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফাঁকি কমবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য সমান নিয়ম প্রয়োগ জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।