
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করতে কিছুটা সময় নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে একই সময়ে শ্রীলঙ্কার ঋণের পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। ঋণের পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আইএমএফের কর্মী পর্যায়ের (Staff Level Agreement) চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
আইএমএফ জানিয়েছে, চতুর্থ মূল্যায়ন শেষে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এখন আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন মিললেই পঞ্চম কিস্তির আওতায় ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে শ্রীলঙ্কা। এ নিয়ে আইএমএফের শ্রীলঙ্কা মিশনপ্রধান ইভান পাপাজর্জিও একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যা গতকাল শুক্রবার আইএমএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় কিস্তির অর্থ এসেছে ২০২৪ সালের জুন মাসে। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, তবে তা পিছিয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ আশাবাদী, ২০২৪ সালের জুন মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
আইএমএফ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে বলেছে, দেশটি মোটামুটি সফলভাবে কর্মসূচির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। জিডিপির সংকোচন থেকে বেরিয়ে তারা আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। রাজস্ব আহরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঋণ পুনর্গঠন কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোপরি, সরকার তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা, যার ফলে সে দেশের সরকারের পতন হয়। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ২০২৩ সালের মার্চে আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে। সেই চুক্তির আওতায় তারা চার কিস্তিতে অর্থ পেয়েছে এবং এখন পঞ্চম কিস্তির প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে।
এপ্রিল মাসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল শ্রীলঙ্কা সফর করে। তবে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে তখন আইএমএফ পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে চুক্তি করেনি। পরে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত করলে আবার আলোচনায় গতি আসে এবং প্রাথমিক চুক্তি সম্ভব হয়।
আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ববাণিজ্যে অনিশ্চয়তার কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে দেশটির প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প বড় ধাক্কা খেতে পারে, যেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষ কর্মরত। শুল্ক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে শ্রীলঙ্কা সরকার ও আইএমএফ।
এছাড়া আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, করছাড় কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা কর্মসূচি জোরদার করার তাগিদও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দেওয়া শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আলোচনায় বসেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, এই আলোচনা চলমান থাকবে।
শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে, যা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সম্প্রতি আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গেছে। সফর শেষে ১৭ এপ্রিল আইএমএফ জানিয়েছে, আরও কিছু আলোচনা বাকি আছে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনের শেষ দিকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী কিস্তি পাওয়া কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।