সরকারি সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ চায় ব্যবসায়ীরা, চায় বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা

প্রতিবেদক: দেশের খাদ্যবাজার মূলত কৃষি উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হলেও এই খাতে অবকাঠামো ও বিনিয়োগে ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করতে এ খাতে ব্যবসার সুযোগ বাড়ানো, ব্যয় কমানো এবং কার্যকর নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

সভায় মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, অনেক সময় সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি করে। সরকারি দপ্তরগুলোর কাজের ধীরগতিও ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করছে। ব্যবসা সহজ না করলে ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা না দিলে সরবরাহব্যবস্থা উন্নত হবে না এবং বাজারেও স্থিতিশীলতা আসবে না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্যবাজারে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মূল্য অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অবকাঠামোগত সংকট। তিনি জানান, ব্যাংকগুলো এই খাতে সহায়তা করতে আগ্রহী হলেও খেলাপি ঋণের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সরকার হিমাগার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, সেটি নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

এসিআই লজিস্টিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, সরবরাহব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং অটোমেশন জরুরি। তিনি জানান, বাংলাদেশে ফসল সংগ্রহ-পরবর্তী অপচয় ১৩–১৪ শতাংশ, যা চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক বেশি। প্রযুক্তির মাধ্যমে এ অপচয় কমানো সম্ভব।

কোয়ালিটি ফিডসের পরিচালক এম সাফির রহমান বলেন, খাদ্যপণ্যের দামের পাশাপাশি পুষ্টিনিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। খাদ্য উপকরণ তৈরিতে যেন ক্ষতিকর কাঁচামাল ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারির প্রয়োজন।

কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, পোলট্রি খাতে কোনো সিন্ডিকেট নেই এবং দাম নির্ধারণের মাধ্যমে সরকারের হস্তক্ষেপ এই খাতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাজার নির্ধারিত দামের মধ্য দিয়েই দীর্ঘমেয়াদে খাতে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে কৃষক যেমন ন্যায্য দাম পান না, তেমনি ভোক্তাও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হন। তিনি উৎপাদন এলাকাভিত্তিক হিমাগার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সঠিক সরকারি পরিসংখ্যানের অভাবে অনেক সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে। অতীতের সরকারগুলো অতিরিক্ত ব্যয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি দায় চাপিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সংস্কার এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নে কার্যকর বিনিয়োগ অপরিহার্য।