
প্রতিবেদক: দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ৮০ থেকে কমিয়ে ৪৬ জনে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন কাঠামোয় ১২ জন মনোনীত ও ৩৪ জন ভোটে নির্বাচিত হবেন। পাশাপাশি সহসভাপতির পদ ছয়টি থেকে কমিয়ে তিনটিতে আনার প্রস্তাবও রয়েছে। নতুন বিধিমালায় সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতির মতো শীর্ষ নেতৃত্ব সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার খসড়া তৈরি করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ইতিমধ্যে এটি দুই দফা ভেটিং পেয়েছে এবং এখন বাণিজ্য উপদেষ্টার মতামতের পর প্রজ্ঞাপন আকারে জারির পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালায় উল্লেখযোগ্য একটি ধারা হলো—টানা দুইবার পরিচালক হওয়ার পর একবার বিরতি ছাড়া কেউ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এটি কেবল ভবিষ্যতের জন্য নয়, পূর্ববর্তী মেয়াদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ফলে টানা দুইবার পরিচালনায় থাকা অনেক ব্যবসায়ী আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ বিধানের ফলে অনেক অভিজ্ঞ সাবেক পরিচালকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁদের অভিযোগ, এটি একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সদস্যদের একাংশ সোচ্চার হয়। পরবর্তীতে সভাপতি মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন এবং ১১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্ষদ বাতিল করে প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে আন্দোলনকারী সদস্যরা গঠন করেন “এফবিসিসিআই বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ” এবং তারা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিলসহ ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেন।
নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৫ জন করে মোট ১০ জন এবং নারী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন করে মোট ২ জন মনোনীত পরিচালক থাকবেন। প্রথম নির্বাচনে সভাপতি হবেন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে এবং জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে।
বিধিমালার প্রেক্ষাপটে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে বাদ দিতে চায়, তা হলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
এদিকে সহায়ক কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের চাপ দিচ্ছেন নিজের পছন্দের লোককে সাধারণ পরিষদের সদস্য করতে। যদিও সহায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম হায়দার বলেছেন, “আমরা সংস্কার চাই, দ্রুত নির্বাচন চাই।”
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, “১২টি সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিধিমালা করা হয়েছে। একটানা দুই মেয়াদ শেষে বিরতির বিষয়টিও ওই প্রস্তাবেই ছিল।” সহায়ক কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এসব অভিযোগ এসেছে, তবে সহায়ক কমিটির কোনো ক্ষমতা নেই, তারা শুধু পরামর্শ দিতে পারে।” তিনি আরও জানান, বিধিমালা চূড়ান্ত হলে দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।