সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি: আট সুবিধা, ১০ চ্যালেঞ্জ ও সরকারির পদক্ষেপের ছক

প্রতিবেদক: সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাযুক্ত একটি উদ্যোগ। গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চাঁদা সরকার লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করছে এবং বিনিয়োগের মুনাফা বাড়লে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের পেনশনও বাড়বে। এই কর্মসূচির অন্তত আটটি সুবিধা তুলে ধরে জনগণকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সরকার। তবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে অন্তত ১০টি চ্যালেঞ্জ, যেগুলো চিহ্নিত করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১১ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, কর্মসূচিকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে শিগগিরই মাঠপর্যায়ে কার্যকর নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। পেনশন কর্মসূচি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (তহবিল ব্যবস্থাপনা) মো. গোলাম মোস্তফা।

কর্মশালায় জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮২২ জন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন, যাঁরা মোট ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা চাঁদা জমা দিয়েছেন। কর্মসূচির চারটি স্কিম—প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা—এর আওতায় এই সদস্যরা এসেছেন। এই কর্মসূচি চালু হয়েছে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট। গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সারা দেশে মেলা আয়োজনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

কর্মশালায় আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অর্থসচিব বলেন, এটি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, যার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

প্রবন্ধে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আটটি সুবিধা তুলে ধরা হয়। প্রথমত, এটি রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাযুক্ত একটি স্কিম। দ্বিতীয়ত, এটি সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করে। তৃতীয়ত, গ্রাহকের চাঁদা সরকার লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে। চতুর্থত, বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা বাড়লে গ্রাহকের পেনশনও বাড়ে। পঞ্চমত, বিনিয়োগের আগে চাঁদার টাকা ফেরত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে সেবা গ্রহণের সুবিধা, মাসিক ভিত্তিতে চাঁদার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মূল্য হিসাবের সুযোগ এবং নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়—কত টাকা চাঁদা দিলে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে।

বর্তমানে বেসামরিক প্রশাসন, রেল ও কম্পট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ)–এ প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৮ লাখ ৮১ হাজার জন পেনশনের আওতায় আছেন। এর বাইরে ৭৫ লাখ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত এবং আরও ১০ লাখ ব্যক্তি সিপিএফ সুবিধা পাচ্ছেন।

তবে কর্মসূচির বাস্তবায়নে কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন—সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে স্কিমের সুবিধা বোঝানো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, ‘সমতা’ স্কিমে বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার নিচে এমন ব্যক্তিদের সঠিকভাবে শনাক্ত করা, অংশগ্রহণকারীদের আইটি জ্ঞানে পার্থক্য, সাইবার নিরাপত্তা ইস্যু এবং প্রগতি ও প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণ বাড়ানো। এছাড়া দক্ষ ও পেশাগত জনবল নিয়োগ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্তি এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়েছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে স্থানীয় পর্যায়ে মেলার আয়োজন করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়কে আরও সক্রিয় করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।