
প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা বর্তমানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে করমুক্ত সীমা বাড়লেও কর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, যার ফলে বিদ্যমান করদাতাদের উপর করের চাপ বাড়বে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে সাতটি স্তরের পরিবর্তে ছয়টি কর স্তর রাখা হচ্ছে, এবং প্রায় প্রতিটি স্তরেই করহার বাড়ছে।
বর্তমানে করমুক্ত আয়ের পরবর্তী ১ লাখ টাকার উপর ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হয়, যা পরিবর্তিত হয়ে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় উন্নীত হচ্ছে এবং করহার বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ শতাংশে। এর পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য করহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আবার পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর বর্তমান ১৫ শতাংশ করহার বাড়িয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগে ২০ শতাংশ করহারসহ একটি অতিরিক্ত স্তর থাকলেও, সেটি এবার বাদ যাচ্ছে। পরবর্তী ২০ লাখ টাকার আয়ে ২৫ শতাংশ করহার বহাল থাকছে এবং এর বেশি আয়ের ওপর আগের মতোই ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।
নারী, মুক্তিযোদ্ধা, তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৫ লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫ লাখ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর বর্তমান ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ট্রেজারি বিল বা বন্ডে বিনিয়োগে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার চিন্তা করা হচ্ছে।
ন্যূনতম কর হার অপরিবর্তিত থাকছে। যেমন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার এবং সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় ৩ হাজার টাকা কর বহাল থাকছে।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কিছু স্বস্তির প্রস্তাবও রয়েছে। তাদের পারকুইজিট বা পারিতোষিক (যেমন বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, গাড়ি সুবিধা ইত্যাদি) করমুক্ত সীমা ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত ভাতা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে এবারের বাজেটে প্রত্যক্ষ কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে ব্যক্তি শ্রেণির উপর চাপ কিছুটা বাড়লেও, করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি ও পারকুইজিটে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে কিছুটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে।