ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে পর্যটন ব্যবসায় প্রাণচাঞ্চল্য

প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা দশ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে দেশ। এই দীর্ঘ ছুটিকে কেন্দ্র করে দেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কক্সবাজার, সিলেট, সুন্দরবন, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ নানা গন্তব্যে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো প্রায় পুরোপুরি বুকড হয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি ভ্রমণপ্রত্যাশী মানুষ গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। অনেকে আবার হাওরের জলাভূমিতে হাউজবোটে চড়তে কিংবা সিলেটের চা বাগান ঘুরতে আগ্রহী। সুন্দরবনের রিসোর্ট ও ঢাকার আশেপাশের বিনোদন স্পটগুলোর বুকিংও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।

সরকারি ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংক, এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অতিরিক্ত ছুটি দিয়েছে। স্কুলগুলোও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ছুটি ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ এবার স্থানীয় পর্যটন স্পটগুলোতেই ছুটি কাটাতে আগ্রহী।

পর্যটন উদ্যোক্তারা জানান, ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে রুম ফাঁকা নেই। যদিও আবহাওয়ার অবস্থা অনেকের ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারে, তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বুকিং আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিফাত আফরিন শামস জানান, তিনি পরিবার নিয়ে নেত্রকোনার বিরিশিরিতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের মাত্র দশ দিন আগে রুম পাওয়া বেশ কঠিন। অনেক চেষ্টা করে একটা রুম পেয়েছি, যদিও ভালো মানের রুমগুলো আগেই বুক হয়ে গিয়েছিল।’

কক্সবাজারের সিগাল হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৮ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত আমাদের ৯০ শতাংশ রুম বুকড। এটা পরিষ্কার যে, এবারের ঈদে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নামবে।’

কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক রানা কর্মকার জানান, দশ দিনের মধ্যে ছয় দিন পুরোপুরি বুকিং আছে। তবে ছুটির শুরু ও শেষের দিকে কিছু রুম এখনও খালি রয়েছে।

সুন্দরবনের সুন্দরী ইকো রিসোর্টের সহকারী বিক্রয় কর্মকর্তা রেদোয়ান আহমেদ সিয়াম জানান, ‘এখন মাত্র দুটি রুম খালি আছে, বাকি সব আগেই বুকিং হয়ে গেছে।’ তিনি মনে করেন, ইকো-ট্যুরিজমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলেই এমনটা ঘটছে।

ময়মনসিংহের মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, ‘৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের সব রুম রিজার্ভ করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহায় তিন দিনের ছুটি থাকায় এমন পরিস্থিতি হয়নি।’

ছুটি রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের ৬৫ শতাংশ রুম ইতোমধ্যে বুকড হয়ে গেছে। এটা পর্যটন খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি ইঙ্গিত।’

গাজীপুরের নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টের হিসাব ব্যবস্থাপক নিতাই চন্দ্র সূত্রধর জানান, ‘ছুটির দিনে সাধারণত বুকিং বাড়ে। অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন, তবে তুলনামূলকভাবে এখনো বুকিং কিছুটা কম। তবে আমরা আশা করি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বুকিং আরও বাড়বে।’

তবে সাজেক ভ্যালিতে তুলনামূলকভাবে কম প্রি-বুকিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম। বিপরীতে, বর্ষা মৌসুমে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজবোট বুকিং প্রায় পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং মোহাম্মদ তানভীর হাসান বলেন, ‘এই বছর ঈদের লম্বা ছুটির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগে মানুষ দুই-তিন দিনের পরিকল্পনায় ভ্রমণে যেত। এবার ১০ দিনের ছুটি থাকায় দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা করছে, যার প্রভাব সরাসরি রিসোর্ট ব্যবসায় পড়ছে।’