
প্রতিবেদক: বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘আর্থিক নিষ্পত্তি’র পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে এই নিষ্পত্তি হতে পারে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান।
আহসান এইচ মনসুর জানান, শেখ হাসিনার সরকারের সময় যারা রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনতে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠন করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েকটি আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যারা মামলা পরিচালনার সকল ব্যয় বহন করে সফল নিষ্পত্তির ভিত্তিতে নির্ধারিত অর্থ গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। সেই থেকে অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করে আসছে, আগের সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠরা দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার করেছেন। সরকারের গঠিত কমিশনের প্রাথমিক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের বিরুদ্ধে ১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক তদন্ত শুরু করেছে। দেশে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহে লন্ডনে সফররত ড. ইউনূস ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ‘উদ্যমী সহায়তা’ চেয়েছেন অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা চুরির টাকা। যুক্তরাজ্যের উচিত আইনি এবং নৈতিকভাবে আমাদের পাশে দাঁড়ানো।”
আহসান মনসুর জানান, অভিযুক্তদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “যদি লঙ্ঘনের ধরন তুলনামূলক হালকা হয়, তাহলে আমরা দেওয়ানি মামলা করব, এবং আর্থিক নিষ্পত্তিও সেই প্রক্রিয়ার অংশ হবে।” তবে তিনি কারা এই নিষ্পত্তির আওতায় আসতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠান অমনি ব্রিজওয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এনফোর্সমেন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর উইগার ভিয়েলিঙ্গা জানান, তারা অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে সহায়তা করতে চায়। গভর্নর মনসুরও জানান, “আমরা চাই, যতটা সম্ভব এই ফান্ড থেকেই অর্থায়ন হোক। ইতোমধ্যেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।”
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিক প্রতিশোধের অংশ। তবে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তার আগেই অর্থ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারের কাজ জোরদার করা হচ্ছে।