এনবিআরের ভার্চ্যুয়াল সভায় ‘ইলন মাস্ক’ ও ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি

প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সভায় ঘটেছে ব্যতিক্রমী ও অদ্ভুত কাণ্ড। রোববার অনুষ্ঠিত এ সভায় বহু কর্মকর্তা বেনামে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে কিছু নাম ছিল ‘ইলন মাস্ক’, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’, ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’ এবং ‘তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’।

এ ধরনের নাম ব্যবহার করে একটি সরকারি রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণে বিস্ময় ও সমালোচনা শুরু হয়েছে এনবিআরের ভেতরে ও বাইরে। অনেকে বিষয়টি কৌতুক হিসেবে দেখলেও এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, আয়কর বিভাগের রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত এই পর্যালোচনা সভা ছিল পূর্ব নির্ধারিত। গত ৪ জুন দেওয়া নোটিশ অনুযায়ী, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে এনবিআর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সভাটি হয়। এতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য, মহাপরিচালক ও কমিশনাররা। পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জুমে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুমে অংশ নেওয়া চার শতাধিক কর্মকর্তার মধ্যে অনেকেই পরিচয় গোপন করে অংশ নেন। দেখা গেছে, অন্তত ২০টি আইডি ছিল ‘iPhone’ নামে, আবার কেউ অংশ নেন ‘Samsung’ নাম ব্যবহার করে। এ ছাড়া ‘২০২৫’, ‘কর অঞ্চল-৬’, ‘সার্কেল-৫’, এমনকি ‘স্যার আছি’ নামের আইডিও দেখা গেছে।

এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক ভার্চ্যুয়াল সভায় সাধারণত নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদেরই অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। জুম লিংকে প্রবেশের আগে হোস্ট কর্তৃক পরিচয় যাচাই করার নিয়ম থাকলেও এবার তাতে শিথিলতা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনেকেই ধারণা করছেন, আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান অসন্তোষের জেরে কেউ কেউ গোপনীয়তা বজায় রাখতে নাম পরিবর্তন করে সভায় অংশ নিয়েছেন। আবার কেউ মনে করছেন, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়াতে বট অ্যাকাউন্ট বা ফেক আইডি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে আয়কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণেও দেখা যাচ্ছে বড় ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২৫) মে মাস পর্যন্ত আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।

এই প্রেক্ষাপটে এমন অনিয়ম ও শৃঙ্খলাহীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এনবিআরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের এমন পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণের নিয়ম কঠোরভাবে মানা উচিত।