বাজেট থেকে বাদ পড়তে পারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ

প্রতিবেদক: ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলেও তা বাতিলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী ২২ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে এই বিতর্কিত সুযোগটি বাদ দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে, দেশের প্রচলিত আয়কর আইনের তফসিলের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ আগে থেকেই ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম বাজেটে এই সুযোগটি বহাল রেখে করহার কয়েক গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ফলস্বরূপ সরকার এ নিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২ জুন বাজেট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা নয়, বরং ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখেন। তবে এলাকাভেদে আয়তনের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর নির্ধারণ করা হয়। বলা হয়, যদি ওই কর পরিশোধ করা হয়, তাহলে টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।

এই সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে দুটি শর্তও যুক্ত করা হয়। প্রথমত, যে অর্থ কোনো বিদ্যমান আইনের আওতায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে এসেছে, তা সাদা করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, অর্থটি অবশ্যই কোনো বৈধ উৎস থেকে উদ্ভূত হতে হবে।

প্রস্তাবিত করহার অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও পৌর এলাকার ভেদে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের জন্য ১০০ থেকে ২,০০০ টাকা এবং ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণের প্রস্তাব দেন অর্থ উপদেষ্টা।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার একাধিক সুযোগ দেওয়া হলেও ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সেই সুবিধা বাতিল করে। কিন্তু চলতি বছর অর্থ উপদেষ্টা আবারও বাজেটে নতুনভাবে করহার বাড়িয়ে সুযোগটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন।

এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের শেষ বাজেটেও নগদ টাকা ও স্থাবর সম্পদ (যেমন জমি, ফ্ল্যাট, প্লট) কেনার মাধ্যমে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছিল, যা এক বছরের জন্য কার্যকর ছিল। সর্বোচ্চ করহারের চেয়ে কম কর দিয়ে টাকাকে বৈধ করার এই পদ্ধতির ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘নৈতিক অবক্ষয়’ এবং সৎ করদাতাদের প্রতি ‘অবিচার’ হিসেবে আখ্যা দেন।

শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কালোটাকা বৈধ করার বাজেটীয় বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও আয়কর আইনের তফসিলে থাকা সুবিধাটি বহাল রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এই সুযোগ থাকলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা কালো অর্থ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিএনপি সরকারের ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে এই ধরনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। এরপর ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আবারও ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়, যা আবারও বিতর্কে পড়ে।