
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) পণ্যের রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার) উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি আরও জানান, আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’-এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় তোলা হবে, যাতে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশে কোনো আইনগত বাধা না থাকে।
শনিবার রাজধানীর মিরপুর সেনা প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) সামিট-এর সম্মানিত অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল।
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, আইসিটি খাতে তিনটি প্রধান চাহিদা—প্রণোদনা, পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যা সমাধান ও অফিস সুবিধা—চিহ্নিত করেছে সরকার। ইতিমধ্যে গুগল পে চালু করা সম্ভব হয়েছে, এবং স্ট্রাইপ-এর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পে-পাত দেশের বাজারে আনতেও কার্যক্রম চলছে, যেখানে বিডাসহ একাধিক টিম একযোগে কাজ করছে।
তিনি আরও জানান, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, তেজগাঁও এবং পূর্বাচলে সফটওয়্যার পার্ক স্থাপনের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে উদ্যোক্তারা কম খরচে অফিস সুবিধা পাবেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এত দিন দেশে নানা ডিজিটাল উদ্যোগ থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তির পারস্পরিক সংযোগ ছিল না—সবগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’। এজন্য সরকার এখন ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐ খাতগুলোতে প্রণোদনা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “বিপিও শিল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি এর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা।” স্মার্ট নগর পরিকল্পনা ও আইটি অবকাঠামো উন্নয়নে গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিনির্ভর চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “নাগরিক সেবাকে সহজ করতে ‘নাগরিক সেবা কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ পাওয়া যাবে, যা সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে।”
তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ বলেন, “সরকারের ভূমিকা কেবল সহায়তাকারী। সফলতা খাতসংশ্লিষ্টদের প্রাপ্য, ব্যর্থতা হলে সেটা সরকারের দায়।” তিনি জাতিসংঘ সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাজারের আকার ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০৩৩ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬.৪ ট্রিলিয়নে।
বাক্কোর সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বিপিও সামিট কেবল একটি শিল্পের সম্মেলন নয়, এটি দেশের তরুণদের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পথ তৈরি করে।”
দুই দিনব্যাপী এ সামিটে ৯টি সেমিনার ও কর্মশালা, চাকরি মেলা, উদ্যোক্তা অধিবেশন, এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দর্শনার্থীরা সরাসরি স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। পাশাপাশি এআর/ভিআর অভিজ্ঞতা, ড্রোন, সাবমেরিন প্রযুক্তি এবং রোবট প্রদর্শনী রয়েছে।