সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ৮৮০০ কোটি টাকা ছাড়াল

প্রতিবেদক: সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে যেখানে এ পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭.৭ মিলিয়ন ফ্রাঁ, সেখানে এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে তার ৩৩ গুণ। ২০২১ সালে এ পরিমাণ ছিল ৮৭১ মিলিয়ন ফ্রাঁ।

দুই বছর টানা পতনের পর হঠাৎ এই বৃদ্ধি এমন সময় ঘটেছে, যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময় পার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন সংকটকালে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত অনেক ব্যক্তি নিরাপদ বিনিয়নের আশায় বিদেশে অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “এখন কেবল সুইস ব্যাংকই নয়—দুবাই, আয়ারল্যান্ডসহ অনেক দেশে এমন নিরাপদ আশ্রয় তৈরি হয়েছে, যেখানে সম্পদ রাখা যায় বা অ্যাকাউন্ট খোলা যায় গোপনে।

তিনি আরও বলেন, “সুইস ব্যাংকের আগের সেই গোপনীয়তা এখন আর আগের মতো নেই। যুক্তরাজ্য থেকে সুইস ব্যাংকে যাওয়া অর্থ আইনগতভাবে বৈধ হলেও, সেগুলোর উৎস অনেক সময়ই সন্দেহজনক হতে পারে। আগে ভুয়া আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার হতো। এখনকার কৌশল আরও জটিল।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্রে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এসব অর্থের গন্তব্য ছিল মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ। জাহিদ হোসেন এ শ্বেতপত্র প্রণয়ন প্যানেলের সদস্য ছিলেন।

এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘Banks in Switzerland’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়, যেখানে সুইস ব্যাংকে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রাখা অর্থের তথ্য দেওয়া হয়। তবে এতে কারা টাকা জমা রেখেছে, কিংবা কী উদ্দেশ্যে রেখেছে—তা প্রকাশ করা হয় না। সুইস ব্যাংকগুলো ঐতিহ্যগতভাবে গোপনীয়তার জন্য পরিচিত, যার ফলে বহু বছর ধরে দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ রাখার অভিযোগ রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সংস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্বচ্ছতা কিছুটা বেড়েছে, তবুও নজরদারির প্রয়োজন এখনো রয়ে গেছে।

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে অর্থের পরিমাণ সাধারণত ৪৮০ থেকে ৬৬০ মিলিয়ন ফ্রাঁর মধ্যে ছিল। ২০২৪ সালের হঠাৎ এই বৃদ্ধি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, “বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার হার মাত্র ১ শতাংশ। কেবল অর্থ পাচার হয়েছে জানা গেলেই হবে না, সেই অর্থ ফেরত আনতে হলে দুই দেশেই মামলা করে জিততে হয়—অর্থ যেখান থেকে গেছে এবং যেখানে জমা আছে। আদালতে তা প্রমাণ করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”