
প্রতিবেদক: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ রোববার অনুমোদিত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বাজেট রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
চলতি বছরের জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সংসদের বাইরের বাস্তবতায় প্রথমবারের মতো সংসদ ছাড়া বাজেট পেশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভি ও অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশনে একযোগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট প্রচার করা হয়।
বাজেট ঘোষণার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত আহ্বান করা হয়। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে। আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদনের পর বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ–সংক্রান্ত একটি এবং শুল্ক–কর–সংক্রান্ত আরেকটি অধ্যাদেশ আজই জারি করা হতে পারে।
এবার সংসদ না থাকায়, বাজেট নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। নির্বাচনকালীন সরকারের সময় সংসদে বাজেট পেশ ও বিতর্ক হত, তবে এবার মতামত নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল অনলাইনে সরবরাহকৃত ফর্ম। তাতেও সাড়া ছিল তুলনামূলক কম।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেটের মূল বরাদ্দ কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে শুল্ক-কর সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সংশোধনী আসতে পারে। বিশেষ করে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট ও ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি বাতিল করা হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুযোগ রাখলেও, ব্যাপক সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তবে কেউ যদি আয়কর রিটার্নে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো সম্পত্তি উল্লেখ করতে ভুলে যান, তাহলে এনবিআরের তলবের আগেই তা সংশোধন করে জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। আয়কর আইনের ১৯(বি) ধারায় এ সুযোগের বিধান রয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে তাকে স্বাভাবিক করের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে।
গত ৩ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালোটাকা বৈধ করার সুযোগটি পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছিলেন। একই বিষয়ে গতকাল এক বাজেট আলোচনায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই সুযোগ খুব একটা কাজে আসে না। যারা পাঁচ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে এক কোটিও দেখাতে পারেন না, তাদের জন্য এই সুযোগের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এ ছাড়া চিকিৎসা ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানির ওপর শুল্ক-করেও পরিবর্তন আসছে। যেমন, চোখের কর্নিয়া (লেন্স) আমদানিতে প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ আগাম কর এবং হার্টের রিংয়ে ৫ শতাংশ শুল্ক বাতিল হতে পারে। পাশাপাশি সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটটি রাজনৈতিক বাস্তবতা, নাগরিক মতামত এবং সমালোচনার ভিত্তিতে কিছু পরিমার্জনার মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।