
প্রতিবেদক: নতুন অর্থবছরের সূচনায় রেমিট্যান্স প্রবাহে এসেছে ঐতিহাসিক সাফল্য। অর্থবছরের শেষ হওয়ার দু’দিন আগেই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৩ হাজার ৪ কোটি ডলার। এই অঙ্ক বাংলাদেশে এক অর্থবছরে পাওয়া রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০–২১ অর্থবছরে, যা ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ এ বছর জুন মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। বিশেষ করে ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকলেও প্রবাসীরা হুড়োহুড়ি করে টাকা পাঠিয়েছেন, ফলে মাসজুড়েই প্রবাহ ছিল চাঙ্গা। সারা অর্থবছর মিলিয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে সাড়ে ২৬ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থ পাচার ও ঋণ জালিয়াতি কমে আসা, যার ফলে হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। করোনার সময় লকডাউনের কারণে যেমন হুন্ডির চাহিদা কমে গিয়েছিল, এবারও আইনশৃঙ্খলা ও আর্থিক নজরদারি জোরদার করায় বৈধ পথে টাকা পাঠানো বেড়েছে।
এই রেমিট্যান্স প্রবাহের সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল সর্বোচ্চ। তবে পরবর্তীতে অর্থ পাচার ও নানা দুর্নীতির কারণে রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় তা নেমে আসে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন তা আবার ঊর্ধ্বমুখী।
এই প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।