রেমিট্যান্স ও রপ্তানির রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, ডলার সংকট কেটে বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বস্তি

প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধি ডলার সংকট কাটিয়ে তুলেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের লেনদেন ভারসাম্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু জুনের শেষ দিনেই (৩০ জুন) এসেছে ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। পুরো ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) এই আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রবাসী আয়ের এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের দিক থেকেও দেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের (২০২৪–২৫) প্রথম ১১ মাসে (জুলাই–মে) মোট ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। শুধু গত মে মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

এই দুই খাতের প্রবৃদ্ধির ফলে দেশের ডলার সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলার ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে, যা আমদানিতেও একই হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডলারের এই স্থিতিশীলতা আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে, এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান রেখেছে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে ঋণ ছাড়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেমিট্যান্সে এই প্রবৃদ্ধির পেছনে সরকারের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা প্রণোদনা, আর হুন্ডি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমেছে এবং বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা এসেছে।

ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের লেনদেন ভারসাম্যেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই–এপ্রিল সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। একইভাবে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। এর ফলে দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে। এই আস্থা ফিরে আসাই বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।