
প্রতিবেদক: বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গুগলের ডিজিটাল লেনদেন সেবা গুগল ওয়ালেট, যা সাধারণভাবে গুগল পে নামে পরিচিত। চলতি বছরের ২৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেবাটি চালু হয়। এর পর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে সিটি ব্যাংকের প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক এতে নিবন্ধন করেছেন। বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে চালু থাকা গুগল পে এখন থেকে বাংলাদেশের গ্রাহকরাও ব্যবহার করতে পারছেন।
এই সেবা চালু করেছে বেসরকারি সিটি ব্যাংক, গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার যৌথ উদ্যোগে। ফলে আপাতত শুধু সিটি ব্যাংকের মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডধারীরাই গুগল পেতে নিবন্ধন করে এই সুবিধা নিতে পারছেন। এতে আলাদা করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বহনের দরকার হচ্ছে না—স্মার্টফোনই হয়ে উঠছে ডিজিটাল ওয়ালেট। গ্রাহকেরা এখন মোবাইল ফোন দিয়েই দোকানে লেনদেন করতে পারছেন, যা লেনদেনকে আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত করে তুলেছে।
সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অরূপ হায়দার জানান, প্রতিদিন গুগল পেতে নতুন নতুন গ্রাহক যোগ দিচ্ছেন। এই সেবা গ্রাহকদের কার্ড বহনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দিচ্ছে এবং লেনদেন আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করছে।
গুগল পে ব্যবহার করতে গ্রাহকদের প্রয়োজন হবে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) প্রযুক্তিসম্পন্ন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এবং গুগল পে অ্যাপ। অ্যাপে ‘অ্যাড পেমেন্ট মেথড’ অপশনে গিয়ে সিটি ব্যাংকের ভিসা বা মাস্টারকার্ড যুক্ত করতে হবে। এরপর ফোন স্ক্রিন আনলক করে POS যন্ত্রের কাছে ধরলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন সম্পন্ন হবে। ৫ হাজার টাকার নিচে লেনদেনে কোনো পাসওয়ার্ড প্রয়োজন নেই, তবে বড় অঙ্কের লেনদেনে পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
সিটি ব্যাংক জানায়, গত ২৪ জুন চালু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১ জুলাই পর্যন্ত) পর্যন্ত ২৪ হাজার ৫১৩ জন গ্রাহক গুগল পেতে নিবন্ধন করেছেন এবং এর মধ্যে ৬ হাজার ৩০০টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বৃহস্পতিবারেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪২১টি, যার আর্থিক পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা।
বর্তমানে সিটি ব্যাংকের ১২ লাখ ডেবিট ও সাড়ে ৪ লাখ ক্রেডিট কার্ডধারী আছেন, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভিসা ও মাস্টারকার্ডের আওতাভুক্ত। অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ডধারীদেরও এই সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশজুড়ে সিটি ব্যাংকের রয়েছে ৩৫ হাজার POS যন্ত্র, যার মধ্যে ৩২ হাজার এনএফসি সমর্থিত। গুগল পে ব্যবহার করে শুধু সিটি ব্যাংকের নয়, অন্যান্য ব্যাংকের POS যন্ত্রেও লেনদেন করা যাবে। আর এই ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের কোনো বাড়তি খরচ হবে না। এমনকি, অনুমতি থাকলে বিদেশি লেনদেনেও (ডলারে) গুগল পে ব্যবহার করা যাবে।
সিটি ব্যাংক আরও জানায়, এই ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি, যা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
মিরপুরের ‘বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোর’-এ সিটি ব্যাংকের এনএফসি সংবলিত POS ব্যবহার হচ্ছে। দোকানটির কর্মচারী রেদওয়ান আহমেদ বলেন, “আগের মতোই গ্রাহকেরা স্বচ্ছন্দে লেনদেন করছেন। মোবাইলে লেনদেন হওয়ায় এখন খুচরা টাকা কিংবা নগদ টাকার ঝামেলা নেই।” ডিজিটাল লেনদেন পদ্ধতির এমন প্রসার খুচরা ব্যবসায়ও নতুন গতি আনছে।