
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রে আবারও ওষুধ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি মাসের শেষ দিকে ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের (চিপস) ওপর এই নতুন শুল্ক কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া পাল্টা শুল্ক কার্যক্রমের সঙ্গেই এসব শুল্ক কার্যকর হতে পারে।
মঙ্গলবার এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, শুরুতে ওষুধে স্বল্প হারে শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে এক বছরের মধ্যে তা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ সময় তিনি জানান, দেশীয় উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কোম্পানিগুলোকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় বিদেশি ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। ১৯৬২ সালের Trade Expansion Act–এর ধারা ২৩২ অনুযায়ী এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এর আগে এপ্রিলে ফেডারেল রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক নোটিশে ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছিল, যা এবার প্রেসিডেন্ট সরাসরি পুনর্ব্যক্ত করলেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেমন এলি লিলি, মার্ক, ও ফাইজার অনেক ওষুধ বিদেশে তৈরি করে থাকে, ফলে শুল্ক আরোপ তাদের উৎপাদন ব্যয় ও কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে।
ওষুধের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ ভোক্তাদের ওষুধের দাম বাড়তে পারে। একইভাবে সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে অ্যাপল ও স্যামসাং-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের দামও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ট্রাম্প আরও জানান, তামার ওপর ৫০ শতাংশ এবং ওষুধ আমদানির ওপর এক বছরের মধ্যে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশকে চিঠি পাঠিয়ে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তবে দর–কষাকষির সুযোগও রাখছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক এক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ৩২ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। বিনিময়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের জ্বালানি, ৪৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য এবং ৫০টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ১ আগস্টের আগে ভারতের সঙ্গে সহ আরও দুই-তিনটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও এই সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। ইউরোপের জন্য নির্ধারিত শুল্ক হার ৩০ শতাংশ।
ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর দ্বিতীয় দফায় কড়া শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদেরও শুল্কের আওতায় আনা হবে। যদিও এতে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর ফলে উৎপাদন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, কর্মসংস্থান ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব গভীর হতে পারে।
বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানি করে, তবে সবচেয়ে বড় চাপের মুখে পড়বে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের ওষুধের সবচেয়ে বড় বাজার। শুধু ২০২৩–২৪ অর্থবছরেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে।