
প্রতিবেদক: মেঘনা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও তিন বছরেও তার নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। মূলত পানির দাম ও চাহিদা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একমত হতে না পারায় এখনো শেষ হয়নি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ।
২০২২ সালের আগস্টে পিপিপি ভিত্তিক প্রকল্পটির নীতিগত অনুমোদন মেলে এবং ২০২৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। চার মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একাধিকবার সময় বাড়িয়ে তা এখন চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা, বেজা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পিপিপিএ ও কোরীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কয়েকবার বৈঠক হলেও পানির দাম ও চাহিদা নিয়ে এখনো সমঝোতা হয়নি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ১ হাজার লিটার পানির দাম ৯১ টাকা প্রস্তাব করলেও অন্যান্য খরচসহ তা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১২০ টাকা, যা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
এনএসইজেডে স্থাপিত মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেড জানিয়েছে, তারা প্রতি ঘণ্টায় ২৫–৫০ হাজার লিটার পানি ব্যবহার করে এবং বর্তমানে গড়ে প্রতি হাজার লিটারে খরচ হয় ৩২ টাকা। দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন করে তুলবে।
প্রকল্প নথি অনুযায়ী, দুই ধাপে মোট দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এবং শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে এবং শেষ হবে ২০৩১ সালের ডিসেম্বরে। তবে কাজ শুরু না হওয়ায় সময়মতো শেষ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই প্রকল্পে সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৬০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যয় ৮,৯৫৩ কোটি টাকা। সরকারি অর্থে জমি অধিগ্রহণ ও নদী শাসন, আর বেসরকারি অর্থে শোধনাগার ও পাইপলাইন নির্মাণ হবে। কোরিয়া ওভারসিজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন প্রকল্পের বেসরকারি অংশীদার এবং কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক ঋণদাতা।
পিপিপির প্রধান নির্বাহী জানান, দাম ও চাহিদা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হচ্ছে না। এসব নির্ধারণ হলেই চট্টগ্রাম ওয়াসা ও বেজার মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে এবং কাজ শুরু হবে।
এনএসইজেডের আয়তন কমিয়ে ২১ হাজার একরে আনা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে এবং ২৭টির নির্মাণকাজ চলছে। বর্তমানে ৪০টি গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ১০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হলেও ২০২৯ সালের মধ্যে চাহিদা বেড়ে ১০ কোটি লিটার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সংকট সমাধানে ২০১৯ সালে একনেকে অনুমোদিত মুহুরী জলাধার প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক পাঁচ কোটি লিটার পানি সরবরাহের জন্য কাজ চলছে, যার ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬১ কোটি টাকায়। কাজটি শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের জুনে।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জানান, ২০৩০ সাল পর্যন্ত পানি সংকট থাকবে না, তবে এরপর নতুন কারখানাগুলো চালু হলে চাহিদা বাড়বে, তখন মেঘনা নদী থেকে পানি সরবরাহ প্রকল্প কার্যকর হবে।