
প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমনের পর যেসব সেবা দেওয়া হয়, সেগুলোর বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে ট্যারিফ বা মাশুল আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ৫২টি মূল সেবার (লাইন আইটেম) বিপরীতে মাশুল আদায় করা হলেও নতুন ট্যারিফ কাঠামোতে সেগুলোকে সংক্ষিপ্ত করে ২৩টিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এ প্রস্তাবনায় চারটি সেবা বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন করে পাঁচটি সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়তে যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর এটি কার্যকর হবে।
এটি ১৯৮৬ সালের পর চট্টগ্রাম বন্দরের সেবামূল্য কাঠামোয় প্রথমবারের মতো বড় ধরনের পরিবর্তন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্টাফিং চার্জ ২.৭৩ ডলার থেকে বেড়ে হবে ৬.৪১ ডলার, লিফট অফ-লিফট অন সেবা ৫.৪৬ ডলার থেকে বেড়ে ৮.১২ ডলার, গ্যান্টিক্রেন চার্জ ২০ ফুটের জন্য ২০.৮০ ডলার এবং ২০ ফুটের বেশি হলে ৩১.২০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফ্রিটাইম শেষে স্টোর রেন্টও বাড়বে। ২০ ফুটের কনটেইনারের জন্য তা হবে ৬.৯০ ডলার, যা ২৮ দিন পরে ২৭.৬০ ডলারে পৌঁছাবে। ৪০ ফুটের কনটেইনারের জন্য প্রথমে ১৩.৮০ ডলার থেকে শুরু হয়ে পরে তা ৫৫.২০ ডলারে পৌঁছাবে।
নতুন ট্যারিফ কাঠামো সম্পর্কে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিশ্বের যেকোনো বন্দর তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে সেবামূল্য অনেক কম। এ অবস্থায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য যুগোপযোগী ট্যারিফ কাঠামো দরকার।”
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, একবারে ৪০ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা ধাপে ধাপে মাশুল বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রিমিয়ার সিমেন্ট পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, “একবারে এত মাশুল বাড়লে তা উৎপাদন খরচে চাপ ফেলবে এবং এর প্রভাব পড়বে পণ্যের বাজারমূল্যে।”
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, “বন্দরের ট্যারিফ ডলারে নির্ধারিত হওয়ায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের খরচ এমনিতেই বেড়েছে। এখন নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির কারণে মাশুল বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়েছে। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “নতুন ট্যারিফ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব দিয়ে বন্দরের সেবা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সম্ভব হবে। এতে ব্যবহারকারীরাও উপকৃত হবেন।”
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণ হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পাঁচটি সেবার মাশুল হালনাগাদ করা হলেও পুরো কাঠামো পরিবর্তন হয়নি। ২০১৩ সালে একটি উদ্যোগ নিলেও তা স্থগিত হয়। ২০১৯ সালে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হলে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইডম কনসাল্টিং’ এবং দেশের ‘লগিকফোরাম’ যৌথভাবে নতুন ট্যারিফ প্রস্তাব তৈরি করে।
এই প্রস্তাবনায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ, ব্যবহারকারীদের জন্য ন্যায্যতা এবং বন্দর রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।