
প্রতিবেদক: সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সিটি ব্যাংক ১,৬৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের (৫৫১ কোটি টাকা) তুলনায় ১,০৮১ কোটি টাকা বা প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি। এ সময় ব্যাংকটির কর–পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০২ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা এক বছরে বেড়েছে ৬২ কোটি টাকা।
তবে ব্যাংকের মূল ব্যবসা—ঋণ ও আমানতের উপর ভিত্তি করে অর্জিত প্রকৃত বা নিট সুদ আয়—গত বছরের তুলনায় কমেছে ৬২৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সিটি ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয় ছিল ৮০৩ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের একই সময়ে নেমে এসেছে মাত্র ১৭৪ কোটিতে—প্রায় ৭৮ শতাংশ হ্রাস।
সাধারণত ব্যাংকগুলোর মূল আয় আসে ঋণের বিপরীতে পাওয়া সুদ থেকে, যেখান থেকে আমানতের বিপরীতে পরিশোধিত সুদ বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই প্রকৃত সুদ আয় হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু ঋণ ও আমানতের সুদের সীমা তুলে দেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোর এই আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। এই শূন্যস্থান পূরণে ব্যাংকগুলো মূল ব্যবসার বাইরে গিয়ে সরকারি ট্রেজারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা অর্জন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও ডলার সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন ও সেবা খাতে বড় বিনিয়োগ কমে গেছে। ফলে ঋণের চাহিদা কমেছে এবং অনেক ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য তৈরি হয়েছে। সেই অর্থ তারা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটিয়ে সরকারের কাছ থেকে উচ্চ সুদে বিনিয়োগ রিটার্ন পাচ্ছে, যার ফলে মুনাফা বাড়ছে।
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিটি ব্যাংক ২০২৫ সালের জানুয়ারি–জুন সময়কালে ঋণ থেকে ২,৬৩৬ কোটি টাকা আয় করেছে এবং আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ২,৪৬২ কোটি টাকা। সেই হিসেবে প্রকৃত সুদ আয় হয়েছে মাত্র ১৭৪ কোটি টাকা, যেখানে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে আয় হয়েছে এই প্রকৃত আয়ের ৯ গুণেরও বেশি।
মুনাফা বৃদ্ধির প্রভাবে ২৯ জুলাই (সোমবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সিটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা ৩.৩৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ টাকা ৫০ পয়সায়। এদিন ব্যাংকটি ডিএসই-তে লেনদেনের শীর্ষে ছিল। প্রায় ২ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, প্রথমার্ধে ব্যাংকের মোট পরিচালন আয়ের মধ্যে ১,৬৫৪ কোটি টাকা এসেছে সরকারি সিকিউরিটিজ থেকে, যা মোট আয়ের ৭৩ শতাংশ। তবে তার মতে, বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয় হিসেব করলে আয়ের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। তার হিসেব অনুযায়ী, মোট আয়ের ৫০ শতাংশ এসেছে ঋণের সুদ থেকে, ২২ শতাংশ বিনিয়োগ থেকে, ২০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ফি থেকে এবং ৮ শতাংশ এসেছে দুর্বল ব্যাংককে তহবিল সরবরাহ করার মাধ্যমে।
এই হিসাবে ব্যাংকটির মোট আয়ের প্রায় ৭৮ শতাংশই এসেছে মূল ব্যাংকিং কার্যক্রম থেকেই, দাবি করেন তিনি