ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির সুফল না কাকতালীয় সুযোগ?

প্রতিবেদক: বাণিজ্যযুদ্ধে সাধারণত কেউ জেতে না, তবে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং যে কিছুটা লাভবান হচ্ছে—তা এখন স্পষ্ট। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া বাণিজ্যনীতি এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর সুফল ঘরে তুলছে বোয়িং।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার আওতায় বোয়িং পাচ্ছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যাত্রীবাহী বিমানের অর্ডার। ইন্দোনেশিয়া ও জাপান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ—বাহরাইন, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত—সবারই তালিকায় রয়েছে বোয়িং।

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই সফলতা প্রমাণ করে যে তাদের ব্যতিক্রমধর্মী বাণিজ্যনীতি মার্কিন উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ক্যাপিটল কাউন্সিলের বিশ্লেষক ব্রুস হার্শ বলেন, “ট্রাম্প প্রথম মেয়াদ থেকেই এ ধরনের চুক্তি করে আসছেন। তার ফলেই এসব দেশ বড় ধরনের কেনাকাটায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।”

এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে যেসব কার্যাদেশ এসেছে, তা বোয়িংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করছে। ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা, কোভিড-পরবর্তী সরবরাহ ব্যবস্থার ধাক্কা এবং উৎপাদন ঘাটতিসহ একাধিক চ্যালেঞ্জে জর্জরিত ছিল তারা।

তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই অর্ডারগুলো অনেক সময়ই চূড়ান্ত চুক্তি নয়, বরং সমঝোতার পর্যায়ে থাকে। যেমন, ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং বিমান কিনতে রাজি হয়েছে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দিলেও দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, “এই ধরনের চুক্তি অনেক সময় এমওইউ অর্থাৎ  কেবল কৌশলগত ঘোষণা—প্রকৃত অর্থে তাৎক্ষণিক অর্ডার নয়।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প না থাকলেও এসব চুক্তির বেশিরভাগই হতো। কাতার এয়ারওয়েজের ১৫০টি বোয়িং বিমানের কার্যাদেশ এর একটি উদাহরণ, যা এমনিতেই হওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্পের সফরের কারণে হয়তো চুক্তির সময় এগিয়ে এসেছে।

অর্ডার পেলেও চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে। ৭৩৭ ম্যাক্সের নতুন সংস্করণ এবং ৭৭৭-৯ মডেল এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এর বাইরেও রয়েছে উৎপাদন ঘাটতি, শ্রমিক ধর্মঘট ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের সমস্যা।

বোয়িংয়ের জন্য ট্রাম্পের শুল্কনীতি একদিকে আশীর্বাদ হলেও অন্যদিকে তা আবার বিপদও ডেকে আনতে পারে। নতুন শুল্কের কারণে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি ইউরোপ পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে বোয়িং বিক্রিতে ধাক্কা লাগতে পারে। যেমন, বাজেট এয়ারলাইন রায়ানএয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে—শুল্ক বাড়লে তারা বোয়িংয়ের সরবরাহ পিছিয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞ কোর্টনি মিলারের ভাষায়, “প্রশ্ন হলো, এই খেলা দীর্ঘমেয়াদে কে ভালো খেলতে পারে?” বোয়িং এই মুহূর্তে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও এভিয়েশন শিল্পের পুরনো টানাপোড়েন আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে।