যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক আলোচনায় প্রস্তুত বাংলাদেশ, বাড়বে আমদানি

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে করে দেশটির সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে এবং পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ছাড় পেতে পারে বলে আশা করছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ধারণা করছে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ৩০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য—বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস—পূরণে সহায়তা করা সম্ভব হবে।

এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। ওয়াশিংটনে তারা ইউএসটিআরের (United States Trade Representative) সঙ্গে তিন দিনের আলোচনা করবেন, যা মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করলেও আমদানি করেছে মাত্র ২৭০ কোটি ডলারের, যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। এ ঘাটতি কমাতে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দুই দেশ ৫ বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করেছে, যার আওতায় প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এলএনজি, সামরিক সরঞ্জামসহ আরও নানা পণ্য আমদানি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ওয়াশিংটন রওনা হওয়ার আগে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার বাড়তি আমদানির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কম থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অন্যদের তুলনায় তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধা দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ১২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক সুবিধা পেয়েছে; আর বাংলাদেশের ঘাটতি মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুবিধা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই আলোচনায় নিরাপত্তা ইস্যু প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন শুল্ক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেই জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে দেখছে। তবে বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য এটা বড় প্রতিবন্ধক হবে না বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকেও একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য—তুলা, গম ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা ও সম্ভাব্য চুক্তি। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলের (NCCA) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বাণিজ্য সচিব জানান, আগে বাংলাদেশ বছরে ১.৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত। সেই অবস্থানে ফিরে যেতে পারলে শুধু তুলা খাতেই প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।

তুলা ছাড়াও গম ও সয়াবিন আমদানির বিষয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সয়াবিন আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং আরও কিছু ব্যবসায়ী সরাসরি বা অনলাইনে বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।