
প্রতিবেদক: এইচএসবিসি (দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন) বাংলাদেশে তাদের খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ব্যাংকটির মাধ্যমে আর কোনো ব্যক্তি গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ গ্রহণ, বীমা বা মেয়াদি বিনিয়োগের মতো খুচরা ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন না। তবে এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ কার্যকর করা হবে না; ধাপে ধাপে, গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে এ সেবা গুটিয়ে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে এইচএসবিসির গ্লোবাল পর্যালোচনার অংশ হিসেবে।
ব্যাংকটির খুচরা ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ি ও বাড়ি কেনার ঋণ, বিমা, মেয়াদি বিনিয়োগ, এবং শরিয়াহভিত্তিক ও প্রচলিত ব্যক্তিগত অর্থায়ন। এসব সেবায় নতুন গ্রাহক নেওয়া ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। এই সিদ্ধান্ত ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও ঘোষণা করা হয়েছে।
২০২৪ সাল শেষে এইচএসবিসি বাংলাদেশের আমানতের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। একই বছরে ব্যাংকটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে—মোট নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৯৯৯ কোটি টাকা, আর ২০২২ সালে ৫৮৭ কোটি টাকা। এই মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে সুদের আয় বৃদ্ধি, আমানতের খরচ হ্রাস এবং ট্রেজারি বন্ড থেকে বাড়তি আয়। ২০২৪ সালে নিট সুদ আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদের আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বন্ড থেকে আয় হয় ৯৯২ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার কমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
যদিও খুচরা ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হচ্ছে, তবে বাংলাদেশে করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এইচএসবিসি। আমদানি-রপ্তানি, ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টসহ করপোরেট ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে ব্যাংকটি। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী গ্রুপটির কার্যক্রম সহজীকরণের অংশ, যাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রয়েছে—এমন বাজারে আরও কার্যকরভাবে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করা যায়।
১৯৯৬ সালে এইচএসবিসি বাংলাদেশে তাদের প্রথম শাখা চালু করে। বর্তমানে দেশে ব্যাংকটির সাতটি শাখা ও উপশাখা, আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় ব্যবসাকেন্দ্র, পাঁচটি সিলেক্ট সেন্টার এবং ১১টি এটিএম বুথ রয়েছে। গুলশানের লিংক রোডে অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। খুচরা ব্যাংকিং বন্ধের প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে।