
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক বাড়িয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে জারি করা এক আদেশে জানানো হয়েছে, এই নতুন শুল্ক হার আগামী ৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার ওপর তারা ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। অর্থাৎ ওই বছর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে তা ৩৫ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে কার্যকর শুল্কহার পণ্যভেদে ভিন্ন হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ কাঠামো বিভিন্ন পণ্যে ভিন্ন হারে শুল্ক নির্ধারণ করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ শিডিউলে তিন ধরনের শুল্কহার বিদ্যমান। প্রথমত, এমএফএন শুল্কহার—যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ এই তালিকাভুক্ত দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য হ্রাসকৃত বা শূন্য শুল্কহার। তৃতীয়ত, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক নেই, তাদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য মতে, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ২.৪০ শতাংশ। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক নীতির ফলে এটি বাড়তে শুরু করে এবং ১ জুনে তা ১৫.৬০ শতাংশে পৌঁছায়। নতুন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে এই হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিতে কার্যকর গড় শুল্কহার ছিল ১৬.৭৭ শতাংশ। নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে এই হার বেড়ে ৩৬.৭৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে সব পোশাকে একরকম শুল্কহার প্রযোজ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, ম্যানমেড ফাইবার দিয়ে তৈরি সোয়েটারে বর্তমানে শুল্কহার ৩২ শতাংশ, যা পাল্টা শুল্কসহ দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে, তুলার সুতা দিয়ে তৈরি সোয়েটারে বর্তমান শুল্ক ১৬.৫০ শতাংশ, যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬.৫০ শতাংশে।
সুতার কাপড়ে তৈরি ছেলেদের আন্ডারপ্যান্টে শুল্কহার এখন ৬ শতাংশ; পাল্টা শুল্কসহ তা হবে ২৬ শতাংশ। যেসব পোশাকে বর্তমানে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক আছে, সেগুলোর শুল্ক বেড়ে ২১ শতাংশে পৌঁছাবে।
পোশাক ছাড়াও, অন্যান্য রপ্তানি খাতেও শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। জুতা খাতে বর্তমানে কার্যকর গড় শুল্কহার ৮.৫ শতাংশ, যা নতুন শুল্কসহ দাঁড়াবে প্রায় ২৮.৫০ শতাংশে। এই খাতে পণ্যভেদে শুল্ক ০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
হ্যাটস ও হেডগিয়ারে গড় শুল্ক ৭.৫ শতাংশ, যা বেড়ে ২৭.৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। চামড়াজাত পণ্যেও গড় শুল্কহার ছিল ১২.২০ শতাংশ, যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২.২০ শতাংশে। উদাহরণস্বরূপ, চামড়ার হাতব্যাগে বর্তমানে শুল্ক ৯ শতাংশ, যা নতুন শুল্কসহ হবে ৩১ শতাংশ।