
প্রতিবেদক: মেট্রো স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো চোখে পড়েছে ব্যাংক লকারের মতো দেখতে ছোট ছোট অনেকগুলো বাক্স। অনেকেই ভাবেন, এগুলো কীসের জন্য? আসলে এগুলো একটি আধুনিক, ইন্টারনেট-ভিত্তিক লকার সেবা—যার মাধ্যমে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে গিয়ে তাদের পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
এই সেবাটি চালু করেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ডিজিবক্স। প্রতিষ্ঠানটি ‘ডিজিটাল বক্স’ নামে এই লকারগুলো বসিয়েছে যাতে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কেনাকাটা কিংবা ব্যাংকিং পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন। দারাজ বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ওয়ান থাউজেন্ড ফিক্স সার্ভিসেস—এই মুহূর্তে ডিজিবক্সের সেবা ব্যবহার করছে।
ডিজিবক্স দারাজের জন্য দেশের ৫২টি জায়গায়, ওয়ান থাউজেন্ড ফিক্স সার্ভিসেসের জন্য ৫টি জায়গায় এবং ব্র্যাক ব্যাংকের জন্য কয়েকটি স্থানে লকার বসিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও ১০০টি স্থানে ব্র্যাক ব্যাংকের জন্য এবং ১০টি নতুন জায়গায় ওয়ান থাউজেন্ড ফিক্স সার্ভিসেসের জন্য লকার বসানো হবে।
প্রথমদিকে কাঠের লকার বানালেও নিরাপত্তার কারণে তা বাদ দিয়ে পরবর্তীতে স্টিলের বাক্স তৈরি করা হয়। এখন সফটওয়্যারসহ সম্পূর্ণ লকার স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ডিজিবক্সের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম চাকলাদার বলেন, “এটি কেবল একটি লকার নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায়িক ধারণা—যা মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে।”
দারাজ থেকে কেনাকাটার সময় গ্রাহক চাইলে ‘ডিজিটাল বক্স’ থেকে পণ্য সংগ্রহের অপশন বেছে নিতে পারেন। পরে নির্ধারিত স্টেশনে গিয়ে, স্ক্রিনে অর্ডার ও ট্র্যাকিং নম্বর দিলে ফোনে একটি পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়। সেটি টাইপ করলেই বাক্স খুলে যায়। কোনো ডেলিভারি ম্যানের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হয় না, সময়মতো সংগ্রহ করা যায় পণ্য।
এই সেবা ব্যবহারে গ্রাহককে ২০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে মেট্রো স্টেশনের সময় অনুযায়ী পণ্য নিতে হয়। তিন দিনের মধ্যে সংগ্রহ না করলে পণ্যটি ফেরত চলে যায় দারাজে। ডিজিবক্স দাবি করে, তাদের লকার হ্যাক বা অননুমোদিত প্রবেশ প্রায় অসম্ভব।
ওয়ান থাউজেন্ড ফিক্স সার্ভিসেস লিমিটেড এই লকারগুলো ব্যবহার করছে পণ্য মেরামতের জন্য। কেউ আইটি পণ্য সার্ভিস করাতে চাইলে, ওয়েবসাইটে ফর্ম পূরণ করে লকারে পণ্য রেখে দিতে পারেন। মেরামতের পর সেই পণ্য আবার একই লকারে রেখে দেওয়া হয়।
ব্র্যাক ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, এবং অন্যান্য ব্যাংকিং সামগ্রী সরবরাহে ডিজিবক্স ব্যবহার করছে।
ডিজিবক্স এবার খাদ্য সরবরাহেও হাত বাড়িয়েছে। ‘ডিজিফুডস’ নামের একটি নতুন সেবার আওতায় নগরীর কিছু এলাকায় ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি সরবরাহ করছে তারা। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার প্যাকেট ডেলিভারি হচ্ছে, লক্ষ্য হলো তা ১০ হাজারে উন্নীত করা।
ডিজিটাল লকার সেবা দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। সময় বাঁচানো, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা যায়।