
প্রতিবেদক: সরকার রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুটি পৃথক পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নীতিমালা সোমবার প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের তদবির বা সুপারিশকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা প্রথমবারের মতো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলো।
একটি নীতিমালা করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক—সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)-এর জন্য। অপর নীতিমালাটি প্রযোজ্য ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য, যেগুলো হলো: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।
উভয় নীতিমালাই সিনিয়র অফিসার থেকে শুরু করে প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদ পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ড, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় নেওয়া হবে। কেউ যদি স্নাতক ডিগ্রিধারী না হন, তবে তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না।
প্রতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য এবং ৩০ জুনকে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ফিডার পদে চাকরিকাল গণনার ভিত্তিকাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কোনো কর্মচারীর গত তিন বছরের মধ্যে কোনো বছরে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে, বা তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে কিংবা বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। লঘুদণ্ডপ্রাপ্তরা দণ্ডোত্তর এক বছর এবং গুরুদণ্ডপ্রাপ্তরা দুই বছর পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ পাবেন না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগপত্র দেওয়া বা গ্রেপ্তার হওয়া সাপেক্ষে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি স্থগিত থাকবে।
পদোন্নতির জন্য মোট ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের গড় ACR ৪৫, শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৫, চাকরিকাল ১৫, মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা ৪, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ১০, দুর্গম এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে অর্জন ২ এবং মৌখিক পরীক্ষা ৮ নম্বর। মৌখিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪ নম্বর পেতে হবে এবং বাকি ৯২ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৭৫ পেতে হবে। এই নম্বরগুলোর ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। অংশ না নিলে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। তবে গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে পারলে পরবর্তীতে সাক্ষাৎকারের সুযোগ মিলবে। কেউ পদোন্নতি পেয়ে যোগ না দিলে তা কার্যকর হবে না। কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এজিএম পদে পদোন্নতির কমিটির সভাপতি হবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (MD) এবং ডিজিএম পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সভাপতি হবেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমডি, আর বাছাই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ডিএমডি (প্রশাসন)। প্রয়োজনে এমডি একাধিক বাছাই কমিটিও গঠন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, “একই সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদোন্নতিতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছিল। এ জন্য ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, সামঞ্জস্য ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আলোচনা সাপেক্ষে দুটি統新 নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এতে যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে একটি শৃঙ্খলিত ও মেধাভিত্তিক পদোন্নতি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে।”