
প্রতিবেদক: দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষকদের মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই অর্থ যাতে প্রকৃত কৃষকের হাতে পৌঁছায়, সে জন্য তদারকি জোরদার করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও প্রাণিসম্পদ খাতেও ঋণ বিতরণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নতুন অর্থবছরের কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা, ডেপুটি গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন, সোনালী ব্যাংকের এমডি শওকত আলী খান, ইসলামী ব্যাংকের এমডি ওমর ফারুক খান এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এবারের কৃষিঋণ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের (৩৮ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ২.৬৩% বেশি। এ বছর প্রথমবারের মতো প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায়—কৃষি ও পল্লিঋণে যেকোনো ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক।
সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত নতুন বা নবায়নকৃত ঋণে সিআইবি মাশুল মওকুফ।
মোট ঋণের ২০% প্রাণিসম্পদ খাতে এবং ২% সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণে ডিপি নোট, লেটার অব হাইপোথিকেশন ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়া অন্য কোনো মাশুল নেওয়া যাবে না।
নীতিমালায় এরিয়া অ্যাপ্রোচ পদ্ধতির মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক ফসল উৎপাদন তথ্য ব্যবহার করে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ক্রপ জোনিং সিস্টেম বা খামারি অ্যাপস থেকে তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতা বাড়িয়ে ক্ষীরা, কচুর লতি, কাঁঠাল, বিটরুট, কালিজিরা, বস্তায় আদা-রসুন ও হলুদ চাষ, খেজুর গুড় উৎপাদনকেও ঋণের আওতায় আনা হয়েছে। অঞ্চলভেদে ফসলভিত্তিক ঋণ বিতরণ ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি বা হ্রাসের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কৃত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণে সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের আদায়কৃত সুদ/মুনাফার একটি অংশ ভাগাভাগি করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন,এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কৃষি খাতের ঋণে পুনঃঅর্থায়ন করছে। আমার মতে, এই অর্থ বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ নয়। আন্তর্জাতিকভাবে, এমনকি আইএমএফও এই চর্চা করে না। সরকার টাকা দিলে আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারি।”