
প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) সময়ে দেশের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মন্থর থেকে গেছে এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) প্রকাশিত ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়।
গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের প্রান্তিকের ৪.৪৮ শতাংশ থেকে কিছুটা বেড়েছে। তবে জুনে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৮.৪৮ শতাংশ হলেও বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১০.০৩ শতাংশে থেকে গেছে, যা সহনীয় মাত্রার অনেক উপরে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গেলেও কাঠামোগত কিছু সমস্যা বিরাজ করছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির দুর্বলতা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হ্রাস এবং বিনিয়োগের ঘাটতি অর্থনৈতিক গতি মন্থর করছে। ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঘাটতি ও ঋণ অনিয়ম পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। তাই আর্থিক সুশাসন উন্নয়ন ও জনগণের ব্যাংক প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ বলে এমসিসিআই মনে করছে।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি। পোশাক ছাড়াও ১.১৪৫ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৯৮৮ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য এবং ৪৪১ মিলিয়ন ডলারের হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ রপ্তানি হয়েছে।
প্রবাসী আয়েও ২৬.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট রেমিট্যান্স হয়েছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার।
যদিও গত জুলাই-মে সময়ে আমদানি ৫.৩১ শতাংশ বেড়েছে (৬৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার), তবুও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে, যা বিনিয়োগে স্থবিরতা ও শিল্প সম্প্রসারণে ধীরগতির কারণে বলে দেখা যাচ্ছে।
এমসিসিআই মনে করে, বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগে মন্থরতার মধ্যেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে স্বস্তি এনেছে। তবে এ ধারা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগবান্ধব নীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষা জরুরি।
রাজস্ব আয় নিয়ে এমসিসিআই জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আদায় ২.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা হয়েছে, যদিও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯.৯৮ শতাংশ কম। ভ্যাট, শুল্ক ও আয়করে আয়ে বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের মুদ্রা মার্কিন ডলারের তুলনায় ৩.৮৯ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। ফলে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২২.৭৭ টাকা হয়েছে।