যমুনা ব্যাংক: টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সুস্থ আর্থিক সূচকে শীর্ষে

প্রতিবেদক: পরিচালনা পর্ষদে একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য থাকলেও যমুনা ব্যাংকের আর্থিক সূচকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং ব্যাংকটি সুফল পেয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ঋণের চাপ এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, পেশাদার ব্যাংকারদের নেতৃত্ব এবং পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংক তালিকায় স্থান করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০০১ সালের ৩ জুন যাত্রা শুরু করা যমুনা ব্যাংক মূলত বড় শিল্পগোষ্ঠী বা করপোরেট ঋণনির্ভর হলেও এসএমই, কৃষি ও রপ্তানি খাতেও সমান গুরুত্ব দিয়ে আসছে। পরিবেশবান্ধব প্রকল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সামাজিক প্রভাবসম্পন্ন খাতে ধারাবাহিক অর্থায়ন করছে ব্যাংকটি। গত দুই বছরে ব্যাংকের নিট মুনাফা ২০০ কোটির বেশি।

বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ এবং আমানতের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকা। বিতরণ করা ১৮,৮৯৯ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে করপোরেট খাতে রয়েছে ১২,৯৯৪ কোটি টাকা (৬৯%), এসএমই খাতে ২,১৪৩ কোটি টাকা (১১%), খুচরা খাতে ১,০৫২ কোটি টাকা (৫.৫%) এবং কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে ৩২৭ কোটি টাকা। ব্যাংকে বর্তমানে ৪,৪১১ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন, যার মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১৯ শতাংশ। ২০২০ সালে নারী কর্মী ছিলেন ৫১২ জন, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৭ জনে।

টেকসই প্রকল্পের সংখ্যা ও ঋণ বরাদ্দও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। ২০২২ সালে ব্যাংকের টেকসই প্রকল্প ছিল ৫৩,৭৬৯টি, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয় ৬১,৭৯৯টি এবং ২০২৪ সালে ৯৭,৪১৭টিতে পৌঁছায়। টেকসই খাতে ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল ১,৪৬৭ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১,৯১৮ কোটি টাকায়।

খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২.৯৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৯২ শতাংশে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি নিট মুনাফায় ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে—২০২০ সালে ২৬৭ কোটি টাকা, ২০২১ সালে ২৪৭ কোটি টাকা, ২০২২ সালে ১৫৮ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ২৩৬ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালে ২৭৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

টেকসই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যমুনা ব্যাংক করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। ২০২০ সালে সিএসআর খাতে ব্যয় ছিল ৩৪ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি টাকায়। গত বছর ব্যাংকটি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করেছে ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, শিক্ষায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন খাতে ১ কোটি ৬৭ লাখ এবং অন্যান্য খাতে ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন গত বছর ৯টি জেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করেছে, যেখানে ৫৩ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বস্তি এলাকায় ১২টি মোবাইল ক্যাম্পে ৪,২১০ জন মানুষ চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ব্যবসায়ী হলেও তারা কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজের সুযোগ দিয়েছেন। এর ফলে ব্যাংকের আর্থিক সূচক ভালো অবস্থায় আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঋণ খারাপ হলেও এর জন্য পরিচালনা পর্ষদ দায়ী নয় বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।