
দেশের ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা দুর্নীতিপরায়ণ, আর ৮২ শতাংশের মতে, বিদ্যমান কর কাঠামো অন্যায্য। এছাড়া, ৭৯ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, কর কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহির অভাব রয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ১২৩টি কোম্পানির প্রতিনিধির তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানের এক হোটেলে ‘করপোরেট ট্যাক্স ও ভ্যাট সংস্কার: এনবিআরের জন্য ন্যায়সংগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সংলাপে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। সংলাপে গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন।
জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী শুল্ক-কর বসানোর হিসাব-নিকাশ নিয়ে অবিশ্বাসী, এবং ৩৫ শতাংশ মনে করেন, শুল্ক-কর দিয়ে কোনো উপকার হয় না। তামিম আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালে করছাড় দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা ২০১১ সাল থেকে ক্রমবর্ধমান। তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাট ছাড় ও অনিয়ম দূর করলে ২০২৩ সালে আরও ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় করা যেত।
সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, সঞ্চালনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও ভ্যাট বিভাগের সদস্য সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, অটোমেশন চালু হওয়ার আগে প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ থাকবে, যাতে ব্যবসায়ীরা ভাবতে না পারে যে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ন্যূনতম করহারের বিধান ভবিষ্যতে তুলে দেওয়া হবে, তবে এখন করলে রাজস্ব আদায় কমে যাবে।
সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব খাতকে নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ হিসেবে ভাগ করলে ২৫ শতাংশ সমস্যা দূর হবে। অটোমেশন চালু হলে সমস্যা কমে ৪৫ শতাংশ হবে। ভ্যাট বিভাগের সদস্য সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, এখনো পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা ৬৫ শতাংশ, যা মধ্যম আয়ের দেশের সঙ্গে মানানসই নয়। তিনি আরও বলেন, ভ্যাটের হার সমস্যা নয়, ভ্যাট রেয়াত দেওয়াই মূল সমস্যা।
সংলাপে উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতা ও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, যথাযথ সংস্কার না হলে ব্যবসায়ীদের আস্থা ও দেশের কর ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। এছাড়া সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশের কম না হওয়া উচিত, এবং কর না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।