
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের (ডব্লিউবি) বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেছেন, কক্সবাজারের বিপন্ন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের কল্যাণে তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বুধবার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২ ডব্লিউতে নির্মিত বহুমুখী কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
জ্যঁ পেসমে বলেন, এটি আমার প্রথম কক্সবাজার সফর। প্রকল্পটি শুধু রোহিঙ্গাদের নয়, স্থানীয় জনগণকেও উপকৃত করছে। দুর্যোগকালে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো যেমন সুরক্ষা দিচ্ছে, তেমনি শিক্ষা ও সামাজিক সেবার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হচ্ছে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প (ইএমসিআরপি) বাস্তবায়ন করেছে এই সেন্টার। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক (এফডিএমএন) ও স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক জাভেদ করিম এবং অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও যুগ্ম সচিব ওবায়দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইএমসিআরপি-এলজিইডির উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুস সালাম ও বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার স্বর্ণা কাজী। সভাপতিত্ব করেন ক্যাম্প ইনচার্জ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফকরুল ইসলাম।
নিজের বক্তব্যে জাভেদ করিম স্মরণ করেন ২০১৮ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের কক্সবাজার সফরের কথা। তাদের উদ্বেগ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ইএমসিআরপি চালু হয়।
তিনি জানান, প্রকল্পের লক্ষ্য হলো দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা, শিক্ষা সুবিধা বৃদ্ধি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫টি সাইক্লোন শেল্টার, ১৬টি বহুমুখী কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টার, ৯টি স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন, ৪ হাজারেরও বেশি সৌরবিদ্যুৎচালিত রাস্তার বাতি, ১ হাজারেরও বেশি ন্যানো-গ্রিড বিদ্যুৎ সুবিধা এবং ৬৭টি বজ্রপাত প্রতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেবাসুবিধা আমার জন্য; আমি যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করি—এই মূলমন্ত্রে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
অতিরিক্ত আরআরআরসি ওবায়দুল্লাহ বলেন, নতুন সেন্টারটি ক্যাম্পের ভেতরে একমাত্র স্থায়ী বহুমুখী স্থাপনা। এটি দুর্যোগকালে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করবে। এর রক্ষণাবেক্ষণে কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
একজন রোহিঙ্গা অভিভাবক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আগে তার মেয়েকে ছোট্ট খড়ের ঘরে পড়াশোনা করতে হতো, এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভবনে শৌচাগার ও পানির সুবিধাসহ পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের সময় এখানেও নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া যাবে।