
প্রতিবেদক:দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আধুনিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্কবৃদ্ধির শিকার হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই শুল্কহার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
৭ আগস্ট থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়। এর আগে কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প দর–কষাকষি, সংশোধন ও বিলম্বের খেলা চালান। ২ এপ্রিল ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণার পর থেকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে একের পর এক শুল্ক কার্যকর হতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে সদ্য স্বাক্ষরিত প্রাথমিক বাণিজ্যচুক্তির প্রতিফলনও দেখা যায়, যেখানে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে নানা ছাড় দেয়।
সর্বশেষ দফায় ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প আগেই সতর্ক করেছিলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে তিনি ‘ডি মিনিমিস’ করমুক্ত সুবিধাও বাতিল করেন। এর ফলে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের বিদেশি পণ্যও শুল্কমুক্তভাবে আর যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবে না। এখন উৎস দেশভেদে এসব পণ্যে শুল্ক দিতে হবে।
ট্রাম্প জুলাইয়ের শেষে অভিযোগ করেন, ডজনখানেক দেশ অন্যায্য বাণিজ্যনীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ৭ আগস্ট থেকে এসব দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক কার্যকর হয়।
বলিভিয়া, ইকুয়েডর, আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া: ১৫%।শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম: ২০%।ব্রাজিল: ৫০% ,ভারত: শুল্কহার দ্বিগুণ হয়ে ৫০% ,চীন: ৩০% (নভেম্বর পর্যন্ত নবায়নযোগ্য) ।
যেসব দেশ ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিত, তাদের পণ্যে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ কর বসানো হয়েছে। তবে ৭ আগস্টের আগে রপ্তানি হওয়া পণ্য অক্টোবরের মধ্যে পৌঁছালে তারা ছাড় পাবে।
যেসব দেশ সরাসরি লক্ষ্যবস্তু হয়নি, তাদের ওপরও একচেটিয়া ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিতে গাড়ি ও ওষুধে ১৫% কর ধার্য হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে শুল্ক ১৫% করা হয়, বিনিময়ে মার্কিন পণ্য আমদানির সুযোগ পায় সিউল। একই ধরনের চুক্তি হয়েছে ব্রিটেন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের সঙ্গে। তবে অনেক প্রতিশ্রুতি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
মে মাসে চীনের সঙ্গে সমঝোতায় ৩০% শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। আগস্টে তা আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। ১০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন চুক্তি না হলে কর আরও বাড়তে পারে। এর আগে চীনা ই-কমার্স পণ্যের করমুক্ত সুবিধা ‘ডি মিনিমিস’ তুলে নেওয়ায় বড় ধাক্কা খায় বেইজিং।
কানাডার শুল্ক বেড়ে ২৫% থেকে ৩৫%-এ দাঁড়িয়েছে। মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ২৫% শুল্ক ৯০ দিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ইউএসএমসিএ চুক্তি অনুযায়ী কিছু পণ্য ছাড় পাবে। ট্রাম্পের দাবি, এই দুটি দেশ ফেন্টানিল প্রবাহ ঠেকাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেনি।
জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ট্রাম্প ফেডারেল আইনের ২৩২ ধারা ব্যবহার করে বিভিন্ন শিল্পে শুল্ক বসিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি, সোলার প্যানেল, ব্যাটারি এবং প্রযুক্তি খাত। নতুন করে সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধ আমদানির ওপরও শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।