
প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত আমিন জুট মিলস পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় কারখানার সরঞ্জামে ধরেছে মরিচা, খসে পড়েছে ভবনের পলেস্তার, আর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। প্রায় ৮০ একর জমিজুড়ে বিস্তৃত এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন অনেকটা ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে।
২০২০ সালের ১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করলে প্রায় চার হাজার শ্রমিক চাকরি হারান। তবে প্রশাসনিক কাজে এখনও কর্মরত আছেন ১২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদের বেতন-ভাতাসহ বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণ, বীমা ও অন্যান্য খাতে গত চার অর্থবছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটির বেশি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিল বাবদ চার বছরে পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এ সময়ে লোকসান হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা, তবে পূর্বে উৎপাদিত পণ্য ও স্ক্র্যাপ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
আমিন জুট মিলসের আশপাশে প্রায় ১৫০ একর জমি রয়েছে। এর বড় অংশ ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। শ্রমিকদের থাকার ২১টি কোয়ার্টারের জানালা, দরজা, টিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে। বর্তমানে কেবল একটি কোয়ার্টার বাসযোগ্য, বাকিগুলো পরিত্যক্ত।
প্রকল্পপ্রধান এ এইচ এম কামরুল হাসান স্বীকার করেছেন, কিছু জমি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং তা উদ্ধারে মামলা চলছে। তবে তিনি দাবি করেন, স্ক্র্যাপ ও যন্ত্রপাতি নিয়ম মেনে দরপত্রের মাধ্যমেই বিক্রি করা হচ্ছে।
কারখানার সাবেক শ্রমিকরা এ পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, “শ্রমিক নেই, কারখানাও বন্ধ অথচ কর্মকর্তারা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। মানুষের কষ্টের টাকা এভাবে নষ্ট করার মানে হয় না।”
তাঁত বিভাগের সাবেক শ্রমিক মো. কামাল উদ্দীন অভিযোগ করেন, অনেক শ্রমিকের পাওনা এখনো পরিশোধ হয়নি, অথচ কারখানা চালুর কোনো উদ্যোগও নেই।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, লোকসানী এই প্রতিষ্ঠানে সরকারের ব্যয় টেকসই নয়। তাঁর মতে, এখানে বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এ ধরনের কিছু করা উচিত। সরকারের উচিত লোকসানমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে সরে আসা।